ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ২ জনের বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমানে সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এডিস মশার উপদ্রব বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে অভিমত তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯৯ জন। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এ সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে জুন থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৫ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে’তে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন এবং আগস্টে ৬৭ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪১৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ৩৪২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭৪ জন। ঢাকার বাইরে ঢাকা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ১৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। যদিও ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিরাও হঠাৎ করে মারা যান। আর করোনা এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের মূল উপসর্গ জ্বর। এ কারণে ডেঙ্গু হলেও করোনা মনে করে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। হাসপাতালে না গিয়ে জ্বরের উপসর্গ নিয়েও মারা যাচ্ছেন কেউ কেউ। এ কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের সঠিক চিত্রও জানা সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এখন বৃষ্টির ধরন ভালো নয়। সে কারণে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি মাস এবং আগামী মাসে এ অবস্থা বহাল থাকতে পারে। এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এখন পর্যন্ত গতবারের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক ভালো রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, করোনার ভয়াবহতার কারণে এবার ডেঙ্গু ভাইরাস ধামাচাপা পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যে চিত্র দেখানো হচ্ছে, সেটা প্রকৃত চিত্র বলে মনে হচ্ছে না। কেননা ডেঙ্গু এবং করোনার উপসর্গ একই ধরনের। প্রথমে জ্বর আসে। এ কারণে ডেঙ্গু হলেও অনেকে করোনা মনে করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে না।
তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বেশি ছিল। চলতি মৌসুমের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি কর্পোরেশনকে কার্যকর তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
এদিকে সোমবার করোনা মহামারির মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদারসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি জনসাধারণকে এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে বাড়িঘরের আশপাশ পরিষ্কার রাখাসহ সচেতন থাকার অনুরোধ জানান।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্টদের মন্ত্রণালয় থেকে দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে যেসব বাস্তবায়ন কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে, প্রতি মাসে এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি বছরজুড়ে কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। চিরুনি অভিযান ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমসহ রুটিন মশক নিধন কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ডিএনসিসি এলাকায় ৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ১ জন আক্রান্ত হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, মশক নিধনে ডিএসসিসি মেয়রের নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগের তুলনায় জনবল এবং মশক নিধন কার্যক্রমের সময় বাড়ানো হয়েছে।
Leave a reply