কামাল হোসাইন, নেত্রকোণা
মাত্র একমাস আগে (৫ আগস্ট) জেলার মদনের ট্রলার ডুবির ঘটনার ১৮ জনের শোক ভুলতে না ভুলতেই এক মাসের ব্যবধানে ফের জেলার উপজেলা কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের রাজনগর এলাকায় বুধবার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পরিবারের মা ও ২ সন্তানসহ ৫ জন জনের মৃত্যু হয়। ঘটনায় মোট ১০জনের লাশ এবং ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। এনিয়ে এক মাসের ব্যবধানে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবারের ঘটনায় ১২ জন নিখোঁজ হবার দাবী করছে প্রশাসন।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বুধবার সন্ধ্যায় নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে। নিহতদের মধ্যে নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের মধ্যনগরের নারী, শিশুসহ ১০ জন রয়েছেন। এঘটনায় বালুবোঝাই ট্রলারের মাঝিসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর থেকে বুধবার সকালে প্রায় ৩৫জন যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার জেলার কলমাকান্দা হয়ে নেত্রকোণা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা যাচ্ছিল। পথে কলমাকান্দা উপজেলার রাজনগর এলাকায় গুমাই নদীতে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি বালুবোঝাই ট্রলারের সাথে যাত্রীবাহী ট্রলারের সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা নারী ও শিশুসহ সকল যাত্রীরা পানিতে ডুবে যায়। এ সময় ৪ জন যাত্রী সাঁতরে নদীর তীরে উঠতে পারলেও নারী ও শিশুসহ ২৫/৩০ জন যাত্রী পানিতে তলিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর নদী থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় এলাকাবাসী।
উদ্ধার হওয়া নিহতরা হচ্ছেন- সুনামগঞ্জের ইনাতনগর গ্রামের আব্দুল ওয়াহাব আলীর স্ত্রী লুৎফুন্নাহার বেগম(২৬), আড়াই বছরের ছেলে ইয়াসিন মিয়া, একই গ্রামের সাহেদ আলীর স্ত্রী মজিদা আক্তার (৫০), একই উপজেলার কামারউড়া গ্রামের আলমগীরের ছেলে অনিক (৭), একই গ্রামের হবিকুল ইসলামের স্ত্রী লাকী আক্তার(৩২), ছেলে জাহিদ (৩), মেয়ে টুম্পা আক্তার (৫), উপজেলার ধর্মপাশার জোবায়ের হোসেনের ছেলে মোজাহিদ(৪),একই গ্রামের আবদুল করিমের স্ত্রী সুলতানা খাতুন (৪৫), নেত্রকোনা সদর উপজেলার মেদনী গ্রামের আবু চানের স্ত্রী মজিদা আক্তার (৪৫)।
এসময় খুঁজতে আসার স্বজনদের দেয়া তথ্যমতে নিখোঁজ আছেন- ইনাতনগরের ওয়াহাব আলীর মেয়ে মনিরা আক্তার খাতুন (৫), আবদুল হান্নানের ছেলে রতন মিয়া (৩৫), ফাতেমা আক্তার (৪৫), মোফাজ্জল হোসেনসহ ১২ জন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল আড়াইটার দিকে কলমাকান্দা থানায় ওসি মোঃ মাজহারুল করিম জানান, “এ ঘটনায় দুই সন্তান ও স্ত্রী মারা যাওয়ায় কলমাকান্দা উপজেলার ইনাতনগরের ওয়াহাব আলী বাদী হয়ে কলমাকান্দা থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। এঘটনায় বালুবাহী নৌকার মাঝিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছেনা।”
নেত্রকোণার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী জানান, ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পুলিশ এলাকাবাসীতে নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসনের এডিএম মাহমুদুল হাসানকে প্রধান করে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সোহেল রানাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতদের লাশ দাফনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা সদরের একজনের জন্য ২০ হাজার ও সুনামগঞ্জের নিহতদের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনও তাদের এলাকার নিহতদের জন্য ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। এদিকে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ থেকে ডুবুরিদল এসে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে।
এ ছাড়া বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিআইডব্লিউটিএ এর একটি ডুবুরি দল নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
Leave a reply