রাস্তায় ফেলে রাখা বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করলেন ওসি ও সাংবাদিক

|

পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ

বৃদ্ধা মা জয়নব বিবি অসুস্থ থাকায় একই বিছানায় খাওয়া-দাওয়া আর মলত্যাগ করতো। অভাবী সংসারে মাকে চিকিৎসা করাতে না পরায় অতিষ্ট হয়ে ছেলে ও তার স্ত্রী মিলে রাতে নিজ বাড়ি থেকে অন্য উপজেলায় প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় এক সাংবাদিক ও থানার ওসি মিলে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে নিজ হাতে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তারা।

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার এ ঘটনায় সাংবাদিক আর পুলিশ প্রশংসায় ভাসছেন। অন্যদিকে নিন্দা ও ঘৃণায় কলুষিত হচ্ছে তার ছেলে এবং স্ত্রী।

দশমিনা উপজেলার স্থানীয় সংবাদকর্মী মামুন তানভীর জানান, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের জয়ঘোড়া গ্রামের আলাউদ্দিন আকনের স্ত্রী জয়নব বিবি। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে এক ছেলে ও মেয়েকে বড় করে তাদের বিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু জয়নব বিবি বৃদ্ধ হয়ে অসুস্থ্য থাকায় সন্তানদের কাছে বোঝায় পরিণত হয়েছেন। জয়নব বিবি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগে বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। বিছানায় বসেই খাবার খান আর বিছানাতেই মল ত্যাগ করেন। তাই মায়ের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে শ্রমিক ছেলে মো. আরিফ ও ছেলের স্ত্রী মোসা. কুলসুম বিবি কিছুদিন আগে এক অটো চালকের মাধ্যমে বাউফল উপজেলা থেকে দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর লক্ষীপুরের টিটিসি ট্রেনিং সেন্টার এলাকার রাস্তার পাশে ফেলে যান। উঠতে ও বসতে না পারায় বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছিলেন তিনি। আবার যেখানেই খাচ্ছেন সেখানেই মল ত্যাগ করছেন তিনি। গন্ধে সহজে কেউ কাছে ভিড়তে চাইছিলেন না।

মামুন জানান, এ ঘটনা দেখে বুধবার স্থানীয় মোশারফ হোসেন নামে এক যুবক ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি তার নজরে আসলে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বৃদ্ধার সাথে কথা বলে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তাকে কিছু শুকনো খাবার কিনে দিয়ে দশমিনা থানার ওসি মো. জসিমকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে ওসি মো. জসিম ও তিনি ঘটনাস্থল থেকে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নিজ হাতে গোসল করান। কিনে দেন নতুন কাপড়। পরে পুলিশের ভ্যানে দুপুরের দিকে দশমিনা হাসপাতালে ভর্তি করানো তাকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান বৃদ্ধার চিকিৎসার জন্য ফ্রি তে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যবস্থা করে দেন।

ওই এলাকার মো. সহিদুল মৃধা জানান, স্থানীয়রা কয়েকজন মিলে বৃদ্ধাকে ওই এলাকার রাসেল নামে একজনের দোকানে কিছুদিন থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু বৃদ্ধা অসুস্থ্য ও থাকার স্থানেই মল ত্যাগ করেন বলে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। একই কথা জানান মোসা. সাথী বেগম নামের স্থানীয় এক গৃহবধূ।

বৃদ্ধা জয়নব বিবি জানান, রুনা নামে তার এক মেয়েকে দশমিনা উপজেলার পশ্চিম আলীপুরা এলাকায় বিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার মেয়ের সাথে থাকতে চান। ছেলের কাছে ফিরতে চান না। তবে সেই মেয়েও নাকি খোঁজখবর নেয়নি। মাটিতে শুয়ে থাকায় পিপড়ের কামড়ে অনেক কষ্ট হত বলে কেঁদে দেন তিনি।

দশমিনা থানার ওসি মো. জসিম বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ সব সময় মানুষের জন্য কাজ করে। ভালো কাজ করতে পারলে সব সময় ভালো লাগে। আমি নিয়মিত ওই বৃদ্ধার খোঁজ খবর রাখছি। আমি সব সময় তার পাশে আছি। তিনি সুস্থ্য হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান জসিম।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply