লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দেউতিরহাট রতিধর এলাকায় ‘দৈবে পরমেশ্বরে’র আদেশে স্ত্রীকে ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে হাতি কিনে দিলেন স্বামী দুলাল চন্দ্র। তা দেখতে এলাকায় মানুষের ঢল নেমেছে। প্রায় ১০ বছর স্ত্রী তুলশী রানী দাসী দেব দেবীর পূজা করে আসছে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে স্বয়ং পরমেশ্বর ভর করে তুলশী রানী দাসীর উপর। স্বপ্নে পরমেশ্বর বলে একটি হাতি কিনতে।
এরপর দৈব বাণীর কথা তুলশী রানী দাসী স্বামী দুলাল চন্দ্রকে জানায়। বিপাকে পরে কৃষক দুলাল চন্দ্র। তখন দুলাল চন্দ্র জমি বিক্রি ও বন্দক রেখে ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করে সিলেট থেকে কিনে আনেন একটি হাতি।
এদিকে, স্ত্রীর ওপর পরমেশ্বর ভর করে বিভিন্ন আদেশ দিয়ে থাকে। আর তা পূরণ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে স্বামী দুলাল। পরমেশ্বরের শেষ দাবি কিনতে হবে হাতি। প্রিয়তমা বউকে রক্ষায় কৃষক দুলাল শেষ সম্বল জমি বিক্রি করে কিনে আনে হাতি। হাতি কিনে বউকে রক্ষায় উপহার এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। কৃষক স্বামীর হাতি উপহার ও বউয়ের প্রতি বিরল ভালোবাসা দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার কৌতুহলী মানুষের ভিড় করছে তাদের বাড়ি।
দুলাল চন্দ্র রায় এর সাথে তুলশী রানীর বিয়ে হয় ২০ বছর আগে। এক পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে তাদের।
স্ত্রী তুলসীর ওপর পরমেশ্বর ভর করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অনেকে বলে তাকে ভূতে ধরেছে। আর স্ত্রীকে সুস্থ করতে নানান চেষ্টা করে যাচ্ছেন স্বামী।
স্ত্রী তুলসীর ওপর ভূত (পরমেশ্বর) ভর করে নানান দাবি করে। প্রথমে দাবি করে হাসঁ জবাই করলে তুলসীকে ছেড়ে যাবে সেই ভূত। হাস জবাই করেও গেল না ভূত। পরবর্তীতে দাবি করে একটি ঘোড়া কিনতে হবে।
দরিদ্র দিনমজুর দুলাল তার স্ত্রীকে তুলসীকে রক্ষায় ৪ বিঘা জমির মধ্যে ১ বিঘা জমি বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনে আনেন। কিন্তু তাতেও ভূত স্ত্রীকে ছেড়ে না গিয়ে উল্টো দাবি করে হাতি কিনতে হবে। অবশেষে দুলাল তার স্ত্রীকে রক্ষায় বাড়ির বাকি তিন বিঘা আবাদী জমি বিক্রি ও বসতবাড়ী বন্ধক, ধার-দেনা করে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় হাতি কিনে আনেন। সিলেট বিভাগের মৌলভী বাজার জেলা থেকে হাতিটি ক্রয় করে নিয়ে আসে ট্রাকে। শুক্রবার গরিবের বাড়িতে হাতির পা দেখে হাজারো দর্শক ভিড় করে।
এদিকে মৌলিভীবাজার থেকে হাতি নিয়ে আসতে ট্রাক ভাড়া লাগে ২০ হাজার টাকা। গাছ বিক্রি করে দেয়া হয় ট্রাকের ভাড়া। সাথে হাতি পোষ মানার জন্য সিলেট থেকে নিয়ে আসা হয়েছে শরীফুল নামের একজনকে। তার মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা।
শরিফুল জানান, হাতি প্রতিদিন ১০টি কলা গাছ, ৩ কেজি ভুসি, ২ কেজি গুড়, ২টি কলার ছড়া খায়। প্রতিমাসে হাতি পালতে প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা লাগবে।
দুলাল চন্দ্র জানান, সম্পত্তির চেয়ে আমার কাছে আমার স্ত্রীর আবদার বড়।
স্ত্রী তুলসী রানী জানান, ভগবানের দয়ায় যেহেতু হাতি এসেছে এখন কিছুটা সুস্থ।
পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, দুলাল চন্দ্র হাতির খরচ কিভাবে সংগ্রহ করবে তা নিয়ে রয়েছে তার দুচিন্তা। কিন্তু তার বউয়ের প্রতি যে এত ভালোবাসা তা দেখে খুশি এলাকাবাসী।
Leave a reply