৫ মাস ধরে নিখোঁজ পরিবহন ব্যবসায়ী, থানায় মামলা না নেয়ার অভিযোগ

|

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী:

নরসিংদীতে ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন শাহ আলম সিকদার (২৯) নামের এক পরিবহন ব্যবসায়ী। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী নিখোঁজ শাহ আলম সিকদার নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলার বরপা গ্রামের আবু সাঈদ সিকদারের এর ছেলে। সে সদর উপজেলার শীলমান্দি এলাকায় স্ত্রীসহ শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতো।

নিখোঁজের ঘটনায় শাহ আলমের মা জাবেদা বেগম ১৪ মে প্রথমে সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ছেলের কোন সন্ধান না মেলায় এবং থানা মামলা গ্রহণ না করায় গত ১০ আগস্ট ‘অপহরণ করে গুম’ করার অভিযোগ এনে ছয় জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ করেছেন। বিজ্ঞ আদালত সদর মডেল থানাকে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ প্রদান করেন। পরে আদালতের নির্দেশে পয়লা সেপ্টেম্বর মামলাটি নথিভুক্ত করে পুলিশ।

মামলার আসামিরা হলো- নরসিংদী শহরের তরোয়া এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে মামুন (৪০), মৃত আবুল হোসেনের ছেলে খাজা (৩৫), আবু কালামের ছেলে আল-আমীন কাজী (৩০), সদর উপজেলার শীলমান্দী এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে আব্দুল মালেক (৪৮), রওশন আলীর ছেলে ফালাইন্না (১৬) ও রায়পুরা উপজেলার মরজাল এলাকার জজ মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর (৩০)। এ ঘটনায় পুলিশ মামলার এজহারভুক্ত আসামি ও পিকআপ চালক ফালাইন্না নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে।

নিখোঁজ শাহ আলমের মা জাবেদা বেগমের অভিযোগ, মামলার বিবরণ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার শীলমান্দির শশুর বাড়িতে বসবাস করে পণ্য পরিবহনের কাজে দুটি পিকআপ ভ্যান ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতো শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহ আলম। পরিবহন ব্যবসার সূত্র ধরে মামুন, খাজা, আল-আমীন, আব্দুল মালেক, ফালাইন্না ও জাহাঙ্গীরের সাথে পরিচয় হয় শাহ আলমের। পরে ব্যবসায়ীক লেনদেন নিয়ে তাদের সাথে শাহ আলমের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জের ধরে গত ৫ মে সন্ধ্যায় শাহ আলমকে তার শশুরবাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় আব্দুল মালেক। এ সময় আগে থেকেই সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল সহযোগি মামুন। তারা প্রতিবন্ধী শাহ আলমকে সিএনজিতে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং অন্যান্য সহযোগিরা অপর একটি সিএনজি করে পিছু নেয়। এরপর আর বাড়িতে ফিরে আসেন নি তিনি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজির করেও শাহ আলমের সন্ধান পাওয়া যায় নি।

শাহ আলমের মা জাবেদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলেকে যারা অপহরণ করে গুম করেছে তারা পুলিশ ও ডিবির (জেলা গোয়েন্দা শাখা) সোর্স। তাই নরসিংদী সদর মডেল থানা মামলা নেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে ছয় জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে গুমের অভিযোগ করি। এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করলেই নিখোঁজ শাহ আলমের হদিস পাওয়া যাবে বলে জানান তার মা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ সেতাব আলী খান বলেন, মামলাটি পয়লা সেপ্টেম্বর থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে। এরমধ্যে শাহ আলমের পিকআপ চালক ফালাইন্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে কিশোর হওয়ায় তাকে গাজীপুর কিশোর অপরাধ সংশোধনী কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।

থানায় কেন মামলাটি নেয়া হয়নি? জানতে চাইলে নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব দত্ত চৌধুরী বলেন, বাদীর এই অভিযোগটি মিথ্যা। তিনি ডায়েরি করতে আসলে আমরা নিখোঁজ শাহ আলমের সাধারণ ডায়েরি নিয়েছি। পরে আদালতের নির্দেশে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগের মামলাটি নথিভুক্ত করেছি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply