গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি দরেই স্থিতিশীল ছিল। তবে সোমবার থেকে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। এদিন পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজে দাম বাড়ানো হয়েছে ২১ টাকা। পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ১৫-২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পাইকারি বাজারের দাম বাড়ার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েনি। সোমবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, পেঁয়াজের দাম নতুন করে বাড়ানো অযৌক্তিক। কারণ, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পরদিন থেকেই দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও পণ্যটি কেজিতে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি দেশে সরবরাহ বাড়াতে ভারতের বিকল্প অন্যান্য দেশ থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কারসাজি করে বাড়ানো হলে বাজার পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। এতে ভোক্তার ওপর নতুন করে বাড়তি চাপ পড়বে। সরকারের উচিত, কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করে দাম কমিয়ে আনা।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর পণ্যটির দাম হুহু করে বেড়ে যায়। ওই সময় পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার একাধিক উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক টিম বাজার তদারকি করছে। পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একাধিক টিম সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে তদারকিতে নামে। এ ছাড়া টিসিবি খোলা বাজারে প্রতি কেজি ৩০ টাকা ও অনলাইনে ৩৬ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানটি বাজার নিয়ন্ত্রণে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয়। পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র (এলসি) খোলাসহ বিশেষ সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৬ টাকা। যা এক দিন আগে ছিল ৬৫ টাকা। দিনের ব্যবধানে পাইকারিতেই দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে ২১ টাকা। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। যা এক দিন আগে ছিল ৬০ টাকা। পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা। যা এক দিন আগে ছিল ৫০ টাকা। হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্যামবাজারের একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে দেশের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা ভারতের বিকল্প বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। এসব পেঁয়াজ দেশের বাজারে ঢুকতেও শুরু করেছে। দাম কিছুটা কমেছিল। তবে টিসিবি স্থানীয় বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ ক্রয় করায় স্থানীয় বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দিচ্ছে। যে কারণে দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, টিসিবি দেশের মানুষের জন্য ভর্তুকিমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করে উপকার করছে। এটা ভালো কাজ। এতে বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা হলেও কমে। তবে তাদের বোঝা উচিত, দেশে এই পণ্যটি এখন আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়াতে হবে। এতে দাম কমতে থাকবে। তবে তারা যদি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি না করে স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয় করে ভর্তুকিমূল্যে বিক্রি করে, এতে বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না।
সোমবার এ বিষয়ে টিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিসিবি ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। ব্যবসায়ীদের কথা পুরোপুরি সত্য না। এটা তাদের আরেক ধরনের কারসাজি। টিসিবি স্থানীয় বাজার থেকেও পণ্য কেনে আবার আমদানির মাধ্যমেও সরবরাহ ঠিক রেখে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য বিক্রি করবে। তবে টিসিবির কাছে বর্তমানে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। যা ট্রাক-সেল ও অনলাইন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এই বিক্রি কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রতিদিন বাজার তদারকি করা হচ্ছে। পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের দাম ভোক্তাসহনীয় করতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া পেঁয়াজের দাম নতুন করে বাড়ানোর পেছনে অভিযান পরিচালনা করা হবে। দাম বাড়ানোর পেছনে অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।
Leave a reply