করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত সেই সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ আবারও নতুন রেকর্ড গড়েছে।
বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে চার হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ায় এবং খরচ কমার কারণে এর পরিমাণ বাড়ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। গত বছরের এ সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৮০০ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, অক্টোবর জুড়ে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়তে পারে। কারণ এ মাসে বড় ধরনের কোনো দেনা শোধ করতে হবে না। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর ২ মাসের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দেনা শোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভের পরিমাণ সামান্য কমতে পারে। প্রতি ২ মাস পর পর আকুর দেনা শোধ করা হয়। এ বাবদ প্রতি ২ মাসে গড়ে ৭৫ থেকে ৯০ কোটি ডলারের দেনা শোধ করতে হয়।
করোনার মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়ছে। একই সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে করোনার প্রভাব মোকাবেলায় বিশেষ ঋণের অর্থ ছাড় হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেড়েছে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় কম হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হচ্ছে। এ কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ বেশি হওয়ায় উচ্চ আশার কিছু নেই। কেননা করোনার নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে এখনও পুরোপুরি পড়তে শুরু করেনি। এর প্রভাব আগামীতে আরও বাড়বে। বিদেশে বাংলাদেশিদের শ্রমের বাজার সংকুচিত হচ্ছে। ফলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাবে। বর্তমানে ব্যবসায়ীদের দেয়া নীতি সহায়তার কারণে অনেক দেনা শোধের জন্য বাড়তি সময় পাওয়া গেছে। এসব দেনা যখন শোধ করার সময় আসবে তখন রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে। এছাড়া অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় গেলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হলে চাপ আরও প্রকট হবে। এ কারণে রিজার্ভের অর্থ খরচ করার ব্যাপারে এখনই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে সাড়ে ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল প্রায় ১৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি আয় বেড়েছে আড়াই শতাংশের বেশি। গত অর্থবছরের এ সময়ে কমেছিল ৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে আমদানি ব্যয় কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল সোয়া ২ শতাংশ।
দেশ বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ায় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসেবে ঘাটতির পরিমাণ কমে এখন উদ্বৃত্ত হয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ২০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩৩০ কোটি ডলার হয়েছে।
গত অর্থবছরে গড়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৪৮৫ কোটি ডলার। দেশে প্রতি মাসে আমদানি ব্যয় হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি ডলার। এ হিসাবে বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে ১০ থেকে ১২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) আন্তর্জাতিক নিরাপদ মান অনুযায়ী একটি দেশের কমপক্ষে ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকতে হয়। এ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেশ নিরাপদ অবস্থানে আছে।
Leave a reply