গাজীপুর প্রতিনিধি:
মাদরাসায় ভর্তি করানোর কথা বলে দরিদ্র এক কিশোরীকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে তিন মাস ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগীর বাবার দেওয়া অভিযোগ পেয়ে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব গাজীপুরের সালনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে (৩৫) গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে একটি গোপন কক্ষ থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, বাবা ও মায়ের সঙ্গে গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকায় থাকতো হতদরিদ্র পরিবারের ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী। বাবার আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় লেখাপড়ার সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছিল ওই কিশোরী। এমন অবস্থায় এই পরিবারটির অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ওই কিশোরীকে কম খরচে লেখাপড়ার প্রস্তাব দেন এক মাদরাসা শিক্ষক। শিক্ষকের এমন প্রস্তাবে রাজি হন তার বাবা।
জীবন গড়ে তোলার নিশ্চয়তা পেয়ে ওই শিক্ষকের হাতে গত ২ আগস্ট মেয়েকে তুলে দেন বাবা। পরে কিশোরীকে একই জেলার শ্রীপুরের ধলাদিয়া এলাকার একটি মাদরাসায় ভর্তির কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যান অভিযুক্ত শিক্ষক। কিন্তু সেখানে নিয়ে মাদরাসায় ভর্তি না করে ওই কিশোরীকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। এরপর থেকেই কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন শুরু করেন এই শিক্ষক। কিশোরী ও তার বাবাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করতে থাকেন গত তিন মাস ধরে। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে ওই কিশোরীকে জিম্মি করেন তিনি।
এরই মাঝে একাধিকবার মেয়ের খবর জানতে ওই শিক্ষকের মুঠোফোনে কল করেন ভুক্তভোগীর বাবা। কিন্তু শিক্ষক জানাতেন তার মেয়ে ভালোভাবে লেখাপড়া করছে। এভাবে তিন মাস যাওয়ার পর কিশোরীর বাবার সন্দেহ হলে তিনি খোঁজ নিতে ধলাদিয়া এলাকায় শিক্ষকের দেওয়া তথ্য মতে মাদরাসায় এসে তার মেয়ের দেখা পাননি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার কিশোরী মেয়েকে গোপন একটি স্থানে আটকে রেখেছেন এই শিক্ষক। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে মেয়েকে উদ্ধার করতে স্থানীয়ভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন কিশোরীর বাবা। পরে তিনি এ ঘটনায় র্যাবের কাছে অভিযোগ দেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব গাজীপুরের সালনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার আসাদুজ্জামান খুলনা জেলার কসবা উপজেলার উত্তর বেতকাশি এলাকার বাসিন্দা। আর শ্রীপুরের ধলাদিয়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ির ভাড়াটিয়া। পরে অভিযুক্তের দেওয়া তথ্য মতে, ধলাদিয়া এলাকার একটি গোপন কক্ষ থেকে ভুক্তভোগী কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে র্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আটকের পর অভিযুক্ত জানায়, তিনি পেশায় একজন মাদরাসাশিক্ষক এবং তার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদি হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। ওই ছাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ইউএইচ/
Leave a reply