রাজ্যকে এনে দিয়েছেন অসংখ্য পদক। তার মধ্যে আছে ৩৪তম জাতীয় ক্রীড়ার রৌপ্য পদকও। যে হাত কারাতের মারপ্যাঁচে ধরাশায়ী করত প্রতিপক্ষকে, সেই হাত দু’টি এখন হাঁড়িয়া মেপে দেয় ক্রেতাকে। এ ছাড়া অন্নসংস্থানের পথ নেই ঝাড়খণ্ডের বিমলা মুণ্ডার।
আর্থিক অবস্থা বরাবরই দুর্বল। মহামারি এবং লকডাউনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ২৬ বছর বয়সি জাতীয় পদকজয়ী বিমলা জানিয়েছেন, হাঁড়িয়া বিক্রি করেই এখন তাঁর সংসার এবং কারাতে প্রশিক্ষণ চলে।
বিমলার কোনও স্পনসর নেই। প্রশিক্ষণ-সহ যাবতীয় খরচ তাকেই যোগাড় করতে হয়। করোনার সময় এই ব্যয় সংস্থান তার কাছে দুঃসাধ্য। এক সময়ে সংসার চলত মায়ের উপার্জনে। কিন্তু বয়সের ভারে বিমলার মা আর দিনমজুরির কাজে যেতে পারেন না।
২০১১ সালে জাতীয় ক্রীড়ায় রৌপ্য। ২০১৪-এ অক্ষয় কুমার আন্তর্জাতিক কুডো টুর্নামেন্টে সোনা। এরপর বিমলার আশা ছিল, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য বা একটা চাকরি পাবেন। সে সব স্বপ্নই থেকে গিয়েছে। মায়ের সঙ্গে এখণ হাঁড়িয়া বিক্রিতেই দিন গুজরান হয় তরুণীর। তাদের উপার্জনের টাকার দিকে তাকিয়ে বাড়িতে অপেক্ষা করে বিমলার বাবা এবং বৃদ্ধ দাদু।
বিমলা জানান, ‘গত বছর তৎকালীন ঝাড়খণ্ড সরকার ঘোষণা করেছিল, রাজ্যের ৩৩ জন পদকজয়ী খেলোয়াড়কে চাকরি দেয়া হবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রক্রিয়া ধামাচাপা পড়েছে।’ রাজ্য সরকারের থেকে কোনও অর্থসাহায্য চান না বিমলা। তিনি চান, আগের সরকারের ঘোষিত প্রকল্প এখন বাস্তবায়িত হোক।
বিমলার বাড়িতে জমে আছে অসংখ্য পদক ও প্রশংসাপত্র। তার আক্ষেপ, সব পদক তার বাড়িতে ঠিকমতো রাখারও জায়গা নেই। সংরক্ষণের অভাবে নষ্টও হয়েছে বেশ কিছু। অতীতে পদক ও প্রশংসাপত্র নিয়ে গর্বিত হলেও এখন বিমলার স্বপ্ন দেখতে আর ভাল লাগে না।
ঝাড়খণ্ডের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বিমলার খবর প্রকাশিত হয়েছে। তারপর তার সংগ্রাম জায়গা পেয়েছে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমেও। এরপরই টনক নড়েছে ঝাড়খণ্ডের সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন রাঁচীর ডেপুটি কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন ক্রীড়াসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমলার পাশে সবরকম সাহায্য নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য।
এখণ মাহামারি চলে গেলে আবার কি ফিরতে পারবেন খেলার মঞ্চে? ভাবতে চান না বিমলা। আপাতত মন দিয়েছেন মদ বিক্রি করে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগাড় করার দিকে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
Leave a reply