বলাৎকার কে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ করার জন্য আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক কর্তৃক ক্রমবর্ধমান ছাত্র ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘ল এন্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সচিব, শিক্ষা সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয় সচিব, আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আগামী ৫ দিনের মধ্যে নোটিশে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে ল’ এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশনকে প্রতিবেদন আকারে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ ইমেইল ও ডাকযোগে উক্ত নোটিশটি প্রেরণ করা হয়েছে।
আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয়, দেশে আলিয়া এবং কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। এইসব মাদ্রাসাগুলোতে প্রায় কোটির কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। এই মাদ্রাসাগুলোতে লক্ষ লক্ষ কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে পুরুষ শিক্ষকদের অধীনে। কিন্তু সেখানে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবের তাদের শিক্ষকদের দ্বারা এসব ছাত্ররা ধর্ষণসহ বিভিন্ন যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এসব যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ফলে অনেক ছাত্ররা মৃত্যুর মুখেও ঢলে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসব ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
নোটিশে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে পুরুষের সাথে পুরুষের জোরপূর্বক যৌনসঙ্গমকে ধর্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। ফলে এ ধরণের যৌনসঙ্গমের শাস্তি অনেক কম থাকায় মাদ্রাসার শিক্ষকরা এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে। তাই এমন কাজ বন্ধে দন্ড বিধির ৩৭৫ ধারায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে পুরুষ কর্তৃক ছাত্রদের বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে এ ধরনের অপরাধে ধর্ষণের মতোই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
একই সাথে আলিয়া মাদ্রাসা এবং কওমি মাদ্রাসাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মহিলা শিক্ষক নিয়োগ করে বিশেষত শিশুদেরকে মহিলা শিক্ষক দ্বারা পাঠদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নোটিশে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মাদ্রাসা প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে লিগ্যাল নোটিশে।
এ প্রসঙ্গে নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী এতিম এবং সমাজের বঞ্চিত শিশু-কিশোররা পড়াশোনা করে থাকে। এ কারণে তাদেরকে নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটলেও তাদের বিষয়ে আইনগত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ বা সামাজিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মত তেমন কাউকে দেখা যায় না। ফলে অপরাধীরা এমন জঘন্য এবং ঘৃণ্য অপরাধ করেও অতি সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। এ ধরণের পরিস্থিতি যাতে আর না ঘটে সে জন্যই কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
Leave a reply