কোভিড নেগেটিভ সনদ নিয়ে কাতার যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বহির্গমন টার্মিনালের হেলথ ডেস্কের সামনে তিনি। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেই যাত্রীকে করা হলো জরিমানা। কিন্তু কেনো?
সোমবার বিকাল চারটায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমনে ঘটে এই ঘটনা। মূলত নকল সনদ নিয়ে কাতার যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন নাসিরউদ্দিন নামের সেই যাত্রী। বিপত্তি বাঁধে টার্মিনালের হেলথ ডেস্কে তার কোভিড সনদটি যাচাই করার জন্য যখন দাখিল করলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে যাত্রীর মোবাইল নাম্বার ও পাসপোর্ট নাম্বার ইনপুট দিয়ে দেখা গেল যে যাত্রী কোভিড পজিটিভ! যদিও যাত্রীর বহন করে আনা প্রিন্টকৃত সনদমতে তিনি কোভিড নেগেটিভ। উদ্বিগ্ন বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং তার সহকর্মীরা অনুমান করলেন যাত্রী হয়তো প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। ততক্ষণে তারা ম্যাজিস্ট্রেটদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এবার অধিকতর যাচাইয়ের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে নাসির উদ্দিনের সনদের প্রিন্ট কপি বের করা হল। সেখানেও নাসির উদ্দিন কোভিড পজিটিভ! করোনা সনদে কিউআর কোড থাকে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে প্রিন্ট করা সনদের কিউআর কোড স্ক্যান করেও দেখা গেল যে নাসির উদ্দিন কোভিড পজিটিভ! কিন্তু নাসির উদ্দিনের বহন করে আনা সনদের কিউ আর কোড স্ক্যান করে কিছু ভুতুড়ে ব্যাপার দেখা গেল। সেখানে রেজাল্ট পজেটিভ নাকি নেগেটিভ তার কিছুই লেখা নেই। দেখা গেল যে নাসির উদ্দিন নমুনা দিয়েছেন ১৯৭০ সালে! যখন তার জন্মও হয়নি!
কিউ আর কোড স্ক্যান করা হলে একটি লিঙ্ক উন্মুক্ত হয়। দেখা গেল যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া সনদের কিউআর কোড এবং নাসির উদ্দিনের বহন করা সনদের কিউআর কোড দুটি ভিন্ন লিঙ্ক উন্মুক্ত করছে! ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করেও নিশ্চিত হওয়া গেল যে নাসির উদ্দিনের নমুনা পরীক্ষা করে তারা তাকে কোভিড পজেটিভ হিসাবেই শনাক্ত করেছেন। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবেই নাসির উদ্দিনের সনদটি ভুয়া। জেনেশুনেই তিনি কোন প্রতারক দলের সাহায্য নিয়ে নিজের কোভিড পজেটিভ অবস্থা গোপন করে কাতার যাওয়ার চেষ্টা করেছেন!
এমন কাজের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ও বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। এই গোটা ঘটনাটির বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেটদের ফেসবুক পেইজে।
সেখানে আরও জানানো হয়েছে, নাসির উদ্দিন চট্টগামের বাসিন্দা। সোমবারই তিনি একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসেছেন কাতারের ফ্লাইট ধরার জন্য। তার জ্বর বা কাশির মত কোন উপসর্গ নেই। কিন্তু জেনে শুনে নিজের কোভিড আক্রান্ত হওয়ার তথ্য গোপন করে তিনি তার যাত্রাপথে অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন এবং তাদেরকে কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলেছেন। ঝুঁকিতে ফেলেছেন বিমানবন্দরে দায়িত্বরত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
অপতৎপরতা বন্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বলে এমন গর্হিত কাজ থেকে সকলকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটদের পেইজে।
Leave a reply