দেশে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’ নামে একটি মাদ্রাসা। শুক্রবার সকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ছাতা মসজিদ রোড (লোহার ব্রিজ) সংলগ্ন একটি বাড়িতে যাত্রা শুরু করে মাদ্রাসাটি।
এই মাদ্রাসার অর্থায়ন করছে আহমেদ ফেরদৗস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারীর পুত্র রেহানুল বারী চৌধুরী।
প্রতিষ্ঠাকালিন শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদান করবেন ১০জন শিক্ষক। বর্তমানে শুধুমাত্র সরকার অনুমোদিত কওমী মাদ্রাসার সিলেবাস পাঠদান করানো হলেও খুব শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে কারিগরী শাখাও। ফলে এখান থেকে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার মতো প্রয়োজনীয় শিক্ষাও অর্জন করবে এখানকার শিক্ষার্থীরা।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আবদুর রহমান আজাদ বলেন, আমরা চলতি বছরের জুন মাস থেকে এরকম একটি মাদ্রাসা স্থাপন করার উদ্যোগ নেই। আজ সেটি বাস্তবে রুপ পেল। ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি জেলায় এরকম মাদ্রাসা স্থাপন করার ইচ্ছা রয়েছে আমাদের ।
মাদ্রাসা স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আমাদের মতো মানুষ। অথচ তারা প্রয়োজনীয় শিক্ষার অভাবে কোথাও কোন কাজ পায় না। ফলে তারা রাস্তাঘাটে চাঁদা দাবি করে এবং উশৃঙ্খল আচরণ করে। তাদের উশৃঙ্খল আচরণের জন্য তারা দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী তাদের সুশিক্ষার অভাব আর আমাদের মতো মানুষরা যারা তাদের শিক্ষার কোন ব্যবস্থা করে দেইনি। আমি মনে করি ব্যক্তিগতভাবে আমি দায়ী। এই তাড়না থেকেই আমরা রাজধানী বিভিন্ন স্থানে এতদিন তাদের শিক্ষা দিয়ে আসছিলাম। এরপর আমরা তাদের সবাইকে একস্থানে শিক্ষা দেয়ার কথা চিন্তা করি। এই চিন্তা থেকেই মাদ্রাসা স্থাপন করা।
মাদ্রাসা নিয়ে তার পরিকল্পনা কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখানে সরকারি কওমী সিলেবাস অনুসারে পাঠদান করবো। তারপর আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য কারীগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করবো যাতে তারা এখান থেকে বের হওয়ার পর স্বাবলম্বী হতে পারে। আমরা তাদেরকে এমনভাবে তৈরি করবে যাতে তারা বোঝা নয় বরং মানবসম্পদে পরিণত হয়। তারা আল্লাহর বান্দা তাদেরও সমাজে সকলের মতো করে সুস্থভাবে বাচার অধিকার আছে।
মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল আজিজ হোসাইনি বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের এইসব মানুষকে কোথাও শিক্ষার সুযোগ দেয়া হয় না। তাদের কোন কাজে নিয়োগ দেয়া হয় না। ফলে তারা সমাজে অবহেলিত অবস্থায় জীবনযাপন করে এবং উশৃঙ্খল হয়ে যায়। আমরা তাদের এখানে নৈতিক ও কারীগরি শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে তাদের আর কারো কাছে অবহেলিত না হয়ে সমাজে স্বাবলম্বী হতে পারে। তারা যাতে আল্লাহর একজন বান্দা হিসেবে সঠিকভাবে সমাজে চলাচল করতে পারে সেই জন্য তাদের সকল সুযোগ করে দেয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।
Leave a reply