জাতীয় শহীদ মিনারের রূপকার, একুশে পদকজয়ী স্থপতি ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৮৮ সালের ১৯ নভেম্বর কানাডার মন্ট্রিলে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
হামিদুর রহমান ১৯২৮ সালে পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মির্জা ফকির মোহাম্মদ এবং পিতামহ মির্জা আবদুল কাদের সরদার। তিনি ঢাকা আর্টস স্কুল (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে চিত্রকলার উপর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন ও পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যান। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চিত্রকলার উপরে উচ্চশিক্ষার্থে ইউরোপ যান।
প্যারিসের ইকোল দ্যা বোজ আর্টস শিক্ষাগ্রহণ করেন এ শিল্পী। এরপরে লন্ডনের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ডিজাইন থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৫৮ সালে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৫৯-১৯৬০ পর্যন্ত তিনি পেনসিলভিয়া অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস চিত্রকলা বিষয়ে গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন।
হামিদুর রহমানকে শহীদ মিনারের নকশা করার কাজ দেয়ার পর থেকেই তিনি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্রীয়ভাবে ধারণ করে এমন কোন নকশা করতে চেয়েছিলেন। তিনি অনুভূমিক ও উল্লম্ব আকারের কাঠামোর মাধ্যমে পুরো বাঙালির পরিচয়কে বের করে আনতে চেয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় কাঠামোর উভয়দিকে চারটি স্তম্ভের মাধ্যমে একটি একত্রীত স্তম্ভের ভারসাম্য এবং সাদৃশ্য রক্ষা করার ব্যবস্থা করেন। প্রকৃত নকশাতে তিনি স্টেইনড কাচের মধ্যে হাজারো চোখের ন্যায় গঠনও এঁকেছিলেন, যার মধ্য দিয়ে সূর্যালোক এসে সামনের মর্মরখচিত মেঝেকে ভোর থেকে গোধূলি পর্যন্ত আলোকিত করে রাখবে। এর বেসমেন্টে তিনি ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্রেস্কোর কাজও করতে চেয়েছিলেন।
হামিদুর রহমানের রূপকল্পনা অনুসারে ১৯৬২ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি কিছুটা পরিবর্তিত আকারেই শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ আরম্ভ হয়। ১৯৬৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়।
১৯৮০ সালে হামিদুর রহমান একুশে পদক লাভ করেন। শিল্পচর্চায় অবদানের ফলে হামিদুর রহমান দেশে-বিদেশে পুরস্কৃত ও সম্মানিত হয়েছেন।
Leave a reply