বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে পেন্ডুলামের মতো দুলছিল বরিশালের ভাগ্য। সেরা চারে খেলা নিয়েও ছিলো শঙ্কা। রাজশাহীর বিপক্ষের ম্যাচটিই যেন রূপ নিয়েছিল এক অঘোষিত ফাইনালে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথমে ব্যাট করে রাজশাহী যখন ২২১ রানের আকাশ ছোঁয়া টার্গেট ছুড়ে দিয়েছিল বরিশালের সামনে, তখন হয়তো বরিশালের সমর্থকরা এক বুক হতাশা নিয়ে সুইচ অফ করে দিয়েছিলেন তাদের সামনে থাকা টিভি সেটটির অথবা পাল্টে দিয়েছিলেন চ্যানেল। তবে যারা সাহস ও ভরসা নিয়ে চোখ রেখেছিলেন ম্যাচে, তারাই সাক্ষী হয়েছেন ইতিহাসের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ইতিহাস গড়ে বরিশালকে জিতিয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন। ৯ চার আর ৭ ছয়ে সেঞ্চুরি হাকানো ইমন যমুনা নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন সেই ইনিংস ও ক্যারিয়ারের নানা দিক নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুখন সরকার।
প্রশ্ন: ইমন, আপনি কেমন আছেন? টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই আপনাদের দলটি খুব বেশি ধারাবাহিক ছিল না। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই জার্নি সম্পর্কে যদি আপনার কাছে জানতে চাওয়া হয় তাহলে কীভাবে বর্ণনা করবেন?
ইমন: আসলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভালো দল ও খারাপ বলে কিছু নেই। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে শুরুর দিকে দল হিসেবে বেশ নড়বড়ে ছিলাম আমরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা ফাইট ব্যাক করতে পেরেছি। রাজশাহীর বিপক্ষে ২২১ রান চেজ করে টুর্নামেন্টে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পেরেছি সেটাই বড় বিষয়। আমাদের দলটা এখন বেশ ভালো অবস্থায় আছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই আমরা।
প্রশ্ন: মঙ্গলবারের ম্যাচে রাজশাহী যখন ২২১ রানের আকাশ ছোঁয়া টার্গেট দিয়েছিলো আপনাদের সামনে। তখন আপনার গেম প্ল্যানিংটা কী ছিল বা কী ভাবছিলেন তখন?
ইমন: সত্যি কথা বলতে তেমন কোনো প্ল্যানিং ছিল না। এটা সত্যি টুর্নামেন্টের শুরুর দিকের ম্যাচগুলোতে আমি যখন ব্যাটিং করেছি তখন একটু ভয় পেতাম অথবা নার্ভাস থাকতাম কিন্তু রাজশাহীর বিপক্ষে ম্যাচে আমার মাথায় কোনো চাপই আসে নাই। কেন জানি আমি খুব বেশি রিলাক্স ছিলাম। কোনোরকম চাপ আসেনি। কত রান করতে হবে কত টার্গেট এগুলো কিছুই মাথায় নেইনি সে সময়। সবচাইতে বড় কথা ড্রেসিংরুমে তামিম ভাই সবাইকে বলে দিয়েছিল কোন প্রেসার নাই, তোমরা তোমাদের নিজের ক্রিকেটটা খেলো। এই কারণেই হয়তো একেবারেই প্রেসার ছাড়াই ম্যাচ ফিনিস করে আসতে পেরেছি।
প্রশ্ন: যখন ৫০ রান করলেন ২৪ বলে তারপরের ভাবনাটা কেমন ছিল?
ইমন: আমি আসলে কোনো কিছু নিয়েই ভাবি নাই। টুর্নামেন্টের তৃতীয় বা চতুর্থ ম্যাচে আমি তামিম ভাইয়ের সাথে ব্যাটিং নিয়ে কথা বলেছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেছিল তুমি যখন ম্যাচে ব্যাটিং করবা, তখন স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাবাই না। ঠিক সেই কাজটাই আমি করেছি। সত্যি বলতে গেলে আমি আমার ন্যাচারাল ইনিংসটাই খেলেছি।
প্রশ্ন: ৪২ বলে আপনার সেঞ্চুরিও হলো, সাথে দলও জিতলো প্রশ্ন হচ্ছে সেই সময় সেঞ্চুরি নিয়ে কী ভাবছিলেন? নাকি দলের জয় নিয়েই ভাবছিলেন বেশি?
ইমন: আসলে সেঞ্চুরি নিয়ে আমি ভাবা শুরু করেছি যখন আমার রান ৯৬। তার আগে আমি কোনোভাবেই সেঞ্চুরি নিয়ে কিছুই ভাবিনি।
প্রশ্ন: ইমন আপনি তো অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন, ভবিষতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
ইমন: দেখেন, সবাইতো স্বপ্ন দেখে জাতীয় দলে খেলার, আমিও তার ব্যাতিক্রম নয়। তবে আমি এটা কখনোই চাই না একটা দুইটা ম্যাচ ভালো খেলেই জাতীয় দলে সুযোগ পেতে । আমার পরিকল্পনা আস্তে আস্তে নিজেকে প্রমাণ করে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলা। এবং লম্বা সময় ধরে দেশকে সার্ভিস দেয়ার।
প্রশ্ন: ধরেন আপনি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন, তখন আপনি ক্যারিয়ার বিষয়ে কী ধরনের পরিকল্পনা করবেন?
ইমন: হা হা হা, এখনও তো পাইনি, যদি পাই তাহলে অবশ্যই এমন কিছু করার চেষ্টা করবে যেন দলে আসা যাওয়ার মধ্যে না থাকতে হয়। আমি চেষ্টা করবো ধারাবাহিকভাবে রান করে যেতে যেন আমি দল ও দেশের জয়ে অবদান রাখতে পারি। সেই সাথে পারফরমেন্স দিয়ে দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলার চেষ্টা করবো।
প্রশ্ন: এখন আসি আপনার ক্রিকেট খেলার শুরুর দিকটা নিয়ে, কখন কীভাবে আপনি ক্রিকেটে আসলেন, কীভাবেই বা ঠিক করলেন আপনি একজন ক্রিকেটার হবেন?
ইমন: আমি ছোটবেলা থেকেই টেপ টেনিসে দারুণ ব্যাটিং করতাম। বলতে গেলে এলাকার সেরা টেপ টেনিস খেলোয়াড় ছিলাম। হঠাৎ একদিন আমার বড় ভাইয়ের একজন বন্ধু ভাইয়াকে বললো আমাকে যেন ভালো কোথাও প্র্যাকটিস করায়। সেই শুরু। এরপর বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েই মনটাকে একেবারেই স্থির করে ফেললাম। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী হলাম। এভাবেই ক্রিকেটকে আপন করে নিয়েছি।
প্রশ্ন: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে যখন সুযোগ পেয়েছিলেন তখন নিজেকে নিয়ে পরিকল্পনা কী ছিল?
ইমন: ভাইয়া, সত্যি কথা বলতে বিশ্বকাপের আগের সিরিজগুলোতে আমি খুব একটা ভালো করতে পারিনি। তবে যখন বিশ্বকাপ দলে সুযোগ আসলো তখন ভাবলাম কোনো প্রেসার নিবো না, একেবারে নিজের ন্যাচারাল খেলাটাই খেলবো যা আছে কপালে। শেষ পর্যন্ত সাফল্য এসেছে সেই সাথে বিশ্বকাপও জিতেছিলাম আমরা।
প্রশ্ন: সব শেষে আপনার কাছে জানতে চাই অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবাল খানকে কেমন দেখছেন আর টুর্নামেন্টে কী চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন?
ইমন: তামিম ভাই অসাধারণ, সব সময় তিনি দলের প্রতিটি খেলোয়ারকে বুস্ট আপ করার চেষ্টা করেন এবং পজেটিভলি চিন্তা করতে সাহায্য করেন। আর তামিম ভাইয়ের মতো একজন প্লেয়ারের সাথে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা খুব আনন্দের ও গর্বের। অন্যদের কথা জানি না কিন্তু তামিম ভাই যা করে আমার তাই ভালো লাগে কারণ তিনি আমার আইকন। আমরা অবশ্যই এখন রেইসে ফিরেছি তাই আলটিমেট লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেই লক্ষ্যেই সামনের ম্যাচগুলোতে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে জয় ছিনিয়ে আনার।
যমুনা নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন শুভ কামনা আপনার জন্য ।
ইমন: আপনিও ভালো থাকবেন।
Leave a reply