যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাটিতে নারী সেনাদের যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির ভয়াবহ চিত্র পেয়েছে পেন্টাগন। অনেক নারী সেনা ফোর্ট হুড ঘাটিতে নিপীড়িত হলেও ব্যবস্থা নেননি কমান্ডাররা। এ অবহেলার কারণে দুই মেজর জেনারেলসহ ১৪ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। কঠোর করা হচ্ছে নিপীড়ন ঠেকানোর আইন।
ফোর্ট হুড ঘাটিতে গেল এপ্রিলে নিখোঁজ হন ২০ বছর বয়সী সেনাসদস্য ভ্যানেসা গিলেন। দু’মাস পর, তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহের খোঁজ মেলে। গ্রেফতারের আগেই আত্মহত্যা করেন সন্দেহভাজন সহকর্মী। স্বজনদের অভিযোগ, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ভ্যানেসাকে। দাবি ওঠে ন্যায়বিচারের।
ভ্যানেসা হত্যার তদন্তেই কেচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে ফোর্ট হুডে। টেক্সাসে ৮৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে মার্কিন বাহিনীর সবচেয়ে বড় ঘাটি ফোর্ট হুডে অবস্থান ৪৫ হাজার সেনার। ১৩৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঘাটিতে যৌন হয়রানির অপরাধে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কথা।
মার্কিন সামরিক বাহিনী বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, গভীর হতাশার সাথে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, যারা ঘাটির নেতৃত্বে ছিলেন তারা এমন পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন যেখানে সবাইকে সমান সম্মানের সাথে দেখা হয়। যৌন হয়রানির অভিযোগের ব্যাপারে সঠিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেননি তারা।
পেন্টাগনের তদন্ত বলছে, পুরো মার্কিন বাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয় ফোর্ট হুড ঘাটিতে। নেতৃত্বে ব্যর্থতার দায়ে মঙ্গলবারই বহিষ্কার করা হয়েছে ১৪ কর্মকর্তাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি চিফ অব স্টাফ জেনারেল জেমস ম্যাককনভিল বলেন, “সেনাবাহিনীতে কাজ করতে আসা ছেলেমেয়েদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা হবে। নিপীড়নের সংস্কৃতি বন্ধ করা হবে। সংস্কৃতির জন্য সেনাবাহিনীর সবাই হয়তো দায়ী, কিন্তু ঘাটির যে পরিবেশ তার জন্য কমান্ডাররাই দায়ী।”
মার্কিন বাহিনীতে নারী সদস্যদের যৌন নিপীড়ন নিয়ে উদ্বেগ অবশ্য নতুন নয়। প্রতিবছর গড়ে ৭ হাজারের বেশি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পড়ে হয়রানি নিয়ে। অবশ্য পেন্টাগনের জরিপই বলছে, হয়রানি কিংবা চাকরি যাওয়ার ভয়ে বেশিরভাগ ঘটনাই চেপে যান নারী সেনারা। কেবল কর্মকর্তাদের বহিষ্কার না করে, নারীদের নিরাপত্তায়, স্থায়ী সমাধান চান ভ্যানেসার স্বজনরা।
নিহত ভ্যানেসা গিলেনের বোন লুপ গিলেন বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তারা মাত্র ৫শ নারী সেনার সাথে কথা বলেছেন। তার মধ্যেই, একশ’র বেশি নারী সহকর্মীদের দ্বারা নিপীড়নের শিকার। ভ্যানেসার মতোই প্রতিশোধ বা চাকরি হারানোর ভয়ে তারা কোনো অভিযোগ করেননি।”
মার্কিন বাহিনীতে নারীর সংখ্যা ২০ ভাগ। কিন্তু সামরিক বাহিনীতে নিপীড়ন-হয়রানির যতো অভিযোগ আসে তার ৬৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী নারীরা।
Leave a reply