স্টাফ রিপোর্টার:
নরসিংদীর সদর উপজেলার মাধবদীতে ব্যাডমিন্টন খেলার সময় কথা কাটাকাটির জের ধরে আহাদ ও আরিফ নামের স্থানীয় দুইটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে মাধবদী শহরের এসপি ইন্সটিটিউটের মাঠে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুইটি গ্রুপই মাধবদীর পৌরমেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আহাদ গ্রুপের সদস্য ও পৌরশহরের বিরামপুর এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে মো. সাব্বির (২৪) এবং আরিফ গ্রুপের সদস্য ও নুরালাপুর গ্রামের কাইয়ুম মিয়ার ছেলে আশিক মিয়া (২৮)। গুলিবিদ্ধ দুজনকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাদের রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় কয়েকজন জানান, রোববার সন্ধ্যার পরে মাধবদীর এসপি ইন্সটিটিউটের মাঠে দুই গ্রুপের সদস্যরা ব্যাডমিন্টন খেলতে যায়। রাত ৯টার দিকে খেলার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে মাধবদীর পৌর মেয়রের আপন ভাগিনা আরিফ গ্রুপের প্রধান মো. আরিফ ঘটনাস্থলে এসে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়তে থাকেন। তার ছোঁড়া গুলিতে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাব্বির গুলিবিদ্ধ হন। গুলিটি সাব্বিরের কানে লাগে। এ সময় আরিফকে থামাতে গিয়ে হাতে গুলিবিদ্ধ হয় তারই খালাতো ভাই আশিক। পরে ঘটনাস্থল থেকে একাধিক গুলির খোসা ও বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে পুলিশ। মূলত খেলাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ সংগঠিত হলেও আহাদ গ্রুপের সাথে আরিফ গ্রুপের বৈরি সম্পর্ক দীর্ঘদিনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধবদী পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিকে মোশাররফ হোসেন প্রধানের হয়ে পৌরসভার টেন্ডার থেকে শুরু করে হাট-বাজার ইজারা, ঠিকাদারিসহ সবকিছু এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন আরিফ। ওই সময়ে মানুষকে ধরে এনে মারধর, গোলাগুলিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগসহ চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। থানায় তার বিরুদ্ধে হতে থাকে একের পর এক মামলা। পরবর্তী সময়ে আরিফকে সরিয়ে আহাদকে পৌরসভার বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দেন মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান। এই ঘটনায় আরিফের ক্ষমতা কমে গিয়ে আহাদের ক্ষমতা বেড়ে যায়। সেই থেকেই আহাদের প্রতি আরিফের ক্ষোভ তৈরি হয়।
এই বিষয়ে জানতে মাধবদীর পৌরমেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান জানান, খেলার মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে গুলির ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছি। আরিফের বাড়িতে রাতভর অভিযান চালানো হয়েছে। তবে সে পলাতক থাকায় তাকে আটক করা যায়নি। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।
এর আগে চলতি বছরের গত ২৫ মার্চে মাধবদীর পৌরমেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধানের বিরুদ্ধেও পিস্তল উঁচিয়ে এক ব্যবসায়ীকে ধাওয়া করার অভিযোগ উঠেছিল। একের পর এক এমন গোলাগুলি ও সহিংসতার ঘটনার সঠিক বিচার না হলে ভয়ভীতির পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যও বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের।
Leave a reply