চুয়াডাঙ্গায় ছাগলচুরি নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড: চোরের ছুরিকাঘাতে মালিক আহত

|

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারি গ্রামে ছাগল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার বিকালে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে। চোরের ছুরিকাঘাতে এক ছাগল মালিক আহত হলে উত্তেজনা ছড়ায় গোটা গ্রামজুড়ে।

গ্রামের কয়েকশ মানুষ তিন চোরকে আটক করে গণপিটুনি শুরু করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছিয়ে পুলিশ গণপিটুনির শিকার তিন চোরকে উদ্ধার করতে গেলে উত্তেজনার পারদ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী চড়াও হয় পুলিশের ওপর।

এসময় দায়িত্বরত পুলিশের একজন উপ পরিদর্শকসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয় বলে দাবি স্থানীয়দের। যদিও পুলিশ বলছে, কোন পুলিশ সদস্য আহত হয়নি। আটক হওয়া তিন চোর আন্তঃজেলা ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য বলেও দাবি পুলিশের।

আটককৃতরা হলো-চুয়াডাঙ্গা শহরের পৌর এলাকার মিরাজুল ইসলামের ছেলে আকাশ (২২), একই এলাকার অহিদুলের ছেলে অমিত (১৭) ও সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের সাজু মণ্ডলের ছেলে হৃদয় (২৯)।

স্থানীয়রা জানায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারি গ্রামে বুধবার দুপর ৩টার দিকে তিন চারজন যুবক একটি ছাগল চুরির চেষ্টা করে। এসময় ছাগল মালিক মতিয়ার মাস্টার, মিল্টনসহ কয়েকজন দেখে চুরির প্রতিবাদ করলে হৃদয় নামে এক চোর ধারালো ছোরা দিয়ে মিল্টনকে ছুরিকাঘাত শুরু করে। এদের চিৎকারে গ্রামের অন্য লোকজন ছুটে এসে চোর সদস্যদের ধাওয়া করে আটক করে। আটকের পর কয়েকশ মানুষ শুরু করে
গণধোলাই।

খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার উপ পরিদর্শক ইমরান কয়েকজন কনস্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পুলিশ সদস্যরা ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর হাত থেকে তিন চোরকে উদ্ধার করে গাড়িতে উঠাতে গেলে পুলিশের প্রতি উত্তেজিত হয়ে ওঠে গ্রামবাসী। এ সময় পুলিশের ওপর ইট পাটকেল শুরু করে ক্ষুব্ধ লোকজন। এতে উপ পরিদর্শক ইমরান, কনস্টেবল জিয়াসহ
চারজন আহত হয়েছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। একইসাথে গাড়ি থেকে তিন চোরকে ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে তারা।

খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান, ইন্সপেক্টর তদন্ত লুৎফুল কবির, অপারেশন ইন্সপেক্টর একরামুল হুসাইনসহ থেকে অতি: পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে চোর সদস্যদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যায় তাদেরকে থানা কাস্টডিতে রাখা
হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ঈমান আলী জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই বোয়ালমারি গ্রামে ছাগল চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে। বুধবার ছাগল চুরির ঘটনাটি আমরা হাতে নাতে ধরে ফেলি। এসময় চোর চক্রের সদস্যরা আমাদের ওপর ধারালো অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে হামলা শুরু করে। তাদের হামলায় ছাগল মালিক গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সানোয়ার হোসেন নাম এক গ্রামবাসী জানায়, চোর চক্রের সদস্যদের গণপিটুনির সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করে। গাড়িতে তোলার সময় ক্ষুব্ধ কিছু লোকজন উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।

স্থানীয় মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার জানান, আটক হওয়া এরা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। বেশ কিছুদিন ধরে এরা ওই এলাকায় চুরি ডাকাতি ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলো।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম জানান, আটক হওয়া আকাশ, হৃদয় ও অমিত চুয়াডাঙ্গা আন্ত:জেলা ডাকাত দলের সদস্য। এই চক্রের সদস্য রয়েছে ১৫/২০ জন। ওরা ওই এলাকায় ডাকাতির জন্যই অবস্থান করছিলো। আটকের পর স্বীকারোক্তিতে এমন তথ্যই জানিয়েছে বলে জানান ওসি জিহাদ। একইসাথে আটক হওয়াদের কাছে থাকা কয়েকটি ধারালো চাপাতি, ছোরা জব্দ করা হয়েছে। তবে ঘটনার সময় কোন পুলিশ সদস্য আহত বা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply