সম্পর্ক গড়া যত মধুর বিচ্ছেদ ততোটাই কষ্টের। তবুও নানা প্রতিকূলতা, বৈরিতা বা বনিবনা না হলে বিচ্ছেদের দিকে গড়ায় সম্পর্ক। বছরজুড়ে অনেক পরিবারেই দেখা মেলে এই ছাড়াছাড়ির ঘটনা। তবে সেসব ঘটনা গণমাধ্যমে আসে না। তারকা দম্পতির ছাড়াছাড়ি হলেই তা গণমাধ্যমের শিরোনামে আসে। এ নিয়ে মেতে ওঠেন ভক্তরা। চলে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি।
চলতি বছর শোবিজের অনেক জনপ্রিয় তারকার সুখের সংসার ভেঙেছে। আবার অনেকেরই বিচ্ছেদ চূড়ান্ত না হলেও ঝুলে আছে আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষায়। অনেকে আবার সঙ্গীকে ছেড়ে আলাদা থাকছেন অভিমান করে। ২০২০ সালে যেসব তারকাদের সংসার ভেঙেছে তাদের নিয়ে এই আয়োজন-
পরীমনির ৩ টাকার বিয়ে টেকেনি
মাত্র তিন টাকা দেনমোহর ধরে পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে বিয়ে করেন ঢাকাই সিনেমার হালের লাস্যময়ী অভিনেত্রী পরীমনি। আর তার সেই ৩ টাকার বিয়ের স্থায়িত্ব হয় মাত্র ৫ মাস!
গণমাধ্যমকে পরীমনি বলেছিলেন, ‘জানেন, আমরা তিন টাকায় বিয়ে করেছি! কিউট না? আমাদের বিয়ের দেনমোহর তিন টাকা।’ চলতি বছরের ৯ মার্চ পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে বিয়ে করে পরীমনি।
হঠাৎ এই বিয়ের বিষয়ে সেদিন গণমাধ্যমে পরীমনি বলেন, ‘অনেক হিসাব–নিকাশ করে তো জীবনের পরিকল্পনা করাই যায়। কিন্তু জীবন চলে তার নিজস্ব পথে। জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ে সবই আল্লাহর হাতে-এটা আমি খুবই মানি। আমার কাছে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাসও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটার ওপর নির্ভর করে মানুষ জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’
বিয়ের পর পাঁচ মাস কেটে গেলেও পরীমনির স্বামী বা সংসারের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি নানা সময়ে ফেসবুকে নিজের অনেক ছবি পোস্ট করলেও স্বামীর সঙ্গে কোনো ছবি শেয়ার করেননি পরীমনি। শুধু তা–ই নয়, স্বামী ও সংসার নিয়ে কিছু জানতে চাইলেও এড়িয়ে গেছেন তিনি।
পরে পরীমনির নিকটজনরা জানিয়েছেন, অনেকটা হুজুগে বিয়েটা করেছেন পরীমনি। বিয়ের পর কয়েকদিন তাকে স্বামীর সঙ্গে দেখা গেছে। তারপর আর কোনো খবর নেই। আগস্টে খবর আসে পরী আর রনির বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তবে এই বিচ্ছেদ নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে মুখ খুলেননি পরীমনি বা রনির কেউ।
ভক্তদের হতাশ করে ভাঙলো শবনম ফারিয়ার সংসার
২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী হারুন অর রশীদ অপুর সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন টিভি অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। কিন্তু বিয়ের এক বছর ৯ মাসের মাথায় বিচ্ছেদ ঘটান ফারিয়া। তবে অপুর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবেন বলে জানান তিনি। আর এই বিচ্ছেদ নিয়ে গণমাধ্যমে যেন মুখরোচক কিছু না লেখা হয় সেই অনুরোধও করেন ফারিয়া।
গত ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে ফারিয়া লেখেন, আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি! ঠিক সেভাবেই আমি আর অপু অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করেছি একসাথে থাকতে! কিন্তু বিষয়টা একটা পর্যায়ে খুব কঠিন হয়ে যায়! জীবনটা অনেক ছোট, এতো কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার কি দরকার? এটা ভেবে আমরা এ বছরের শুরু থেকেই সিদ্ধান্তে আসি আমরা আর একসাথে থেকে কষ্টে থাকতে চাই না! আমাদের প্রায় আড়াই বছরের বৈবাহিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে আবারও ৫ বছরের পুরনো বন্ধুত্বে ফিরে গিয়েছি। বিবাহে বিচ্ছেদ হয়, কিন্তু ভালবাসার বিচ্ছেদ নেই! বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ নেই!
৮ বছরের সংসার ভেঙে গেলো শাবনূরের
২০০৮ সালে ‘বধূ তুমি কার’ ছবিতে কাজ করতে গিয়ে অনিক নামে এক নবাগত অভিনেতার সাথে পরিচয় হয় ঢাকাই সিনেমার নন্দিত অভিনেত্রী শাবনূরের। পরিচয়ের সূত্রে প্রেম। ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনিককে বিয়ে করে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান শাবনূর। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনিক-শাবনূরের সংসার আলো করে আসে ছেলে আইজান নিহান। কিন্তু সেই সংসার ভেঙে গেলো ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি। বনিবনা না হওয়ায় অনিককে তালাক দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শাবনূর। গত ২৬ জানুয়ারি স্বামীর ঠিকানায় তালাকের নোটিস পাঠান এ চিত্রনায়িকা।
তালাক নোটিসে শাবনূর অভিযোগ করেন, তার স্বামী অনিক মাহমুদ সন্তান ও তার যথাযথ যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন না। বিভিন্ন সময়ে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন অনিক। বহু চেষ্টা করেও অনিকের আচরণে পরিবর্তন আনতে পারেননি তিনি। যে কারণে আর উপায় না দেখে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শাবনূরের এসব অভিযোগ অনিক অস্বীকার করলেও এ বছরেই ভেঙে গেলো তাদের আট বছরের সংসার।
দ্বিতীয় সংসারও টিকলো না অপূর্বর
এ বছর তারকা দম্পতির যে তালাকের ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি চমকের জন্ম দিয়েছে তা হলো জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও তার স্ত্রী নাজিয়া হাসান অদিতির বিচ্ছেদ। দীর্ঘ ৯ বছরের দাম্পত্য জীবন ছিলো অপূর্ব ও অদিতির। ২০১১ সালে বিয়ে করেছিলেন তারা। শোবিজে তাদের আদর্শ দম্পতি হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু গেলো ১৭ মে ফেসবুকে ভেসে ওঠে তাদের বিচ্ছেদের বিষয়টি। অপূর্ব ও অদিতি দুজনেই নিজ নিউ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সেদিন রাতে এক স্ট্যাটাসে অপূর্ব তালাকের কথা স্বীকার করে তার জন্য এবং সাবেক স্ত্রী অদিতি এবং তাদের সন্তানের জন্য দোয়া চান। সেখানে অপূর্ব লেখেন, ‘বেদনার সাথে আমি সবাইকে জানাচ্ছি যে, নাজিয়া হাসান অদিতির সাথে আমার ৯ বছরের দুর্দান্ত যাত্রাটি অপ্রত্যাশিতভাবে থেমে গেলো। আমরা এমনটা চাইনি। তবে আমাদের জীবন এখানে আমাদের এনে দাঁড় করিয়েছে।’ অদিতি ছিলেন অপূর্ব’র দ্বিতীয় স্ত্রী। এর আগে অপূর্ব সংসার পেতেছিলেন অভিনেত্রী প্রভার সঙ্গে।
মুনমুনেরও দ্বিতীয় সংসার টিকলো না
অপূর্বর মতোই ভাগ্যরেখা ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা মুনমুনের। চলতি বছর তারও দ্বিতীয় সংসার ভেঙে গেছে। ১০ বছর আগে প্রেম করে মীর মোশাররফ রোবেনকে বিয়ে করেছিলেন ‘রানি কেন ডাকাত’ খ্যাত এ নায়িকা। এই দশ বছরের সংসারে দুটি সন্তানও রয়েছে। এরপরও ডিভোর্সের দ্বারস্থ হলেন মুনমুন। চলতি বছরের আগস্টে স্বামী মীর মোশাররফ ডিভোর্স দেন মুনমুন। স্বামী রোবেনের নির্যাতন ও স্বার্থপরতার শিকার হয়ে তাকে তালাক দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান মুনমুন।
এর আগে ২০০৩ সালে সিলেটের একজন ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছিলেন মুনমুন। সিনেমাপাড়া ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে চলে যান। ২০০৬ সালে সেই সংসার ভেঙে যায় মুনমুনের। এরপর দেশে ফিরে আসেন। ফের শোবিজে যোগ দিলে পরিচয় হয় দ্বিতীয় স্বামী রোবেনের সঙ্গে।
ভাঙনের সুর বাজছে তমা মির্জার সংসারে
এখনও ডিভোর্সের বিষয়টি নিশ্চিত না হলেও সে পথেই রয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা তমা মির্জা। তমার সংসারে ভাঙনের সুর বাজছে কিছুদিন ধরে। ৭ মে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক হিশাম চিশতিকে বিয়ে করেন তমা মির্জা। একটু দেরিতে হলেও ডিসেম্বরে হানিমুনে যান এ দম্পতি। আর হানিমুন সেরে দেশে ফিরেই বাড্ডা থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা করেন এ দম্পতি।
যৌতুক, নির্যাতন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গত ৫ ডিসেম্বর মামলা করেন তমা। অন্যদিকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে গত ৬ ডিসেম্বর মামলা করেন এই অভিনেত্রীর স্বামী হিশাম চিশতী।
হিশামের করা মামলায় তমা মির্জাকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া তার বাবা-মা, ভাই এবং অজ্ঞাতপরিচয় একজনকেও আসামি করা হয়েছে। হিশাম চিশতি জানিয়েছেন, তিনি নানা কারণে তমা ও তার পরিবারের ওপর বিরক্ত হয়ে বিচ্ছেদ চাইছেন অনেকদিন ধরেই। সেই জেরেই হামলার শিকার হতে হয়েছে তাকে।
তমাভক্তদের অনেকেই মনে করছেন, এই সংসারটি টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে। বিচ্ছেদের মাধ্যমেই হয়তো দুজন শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে হাঁটবেন।
ইউএইচ/
Leave a reply