টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ১১ বছর মানসিক ভারসাম্যহীন একটি নারীকে যত্নে লালন পালন করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়ে মানবতার এক নিদর্শন গড়েছেন রনি নামের এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবরিয়া গ্রামে। আশ্রয়দাতা আসাদুজ্জামান রনি (৩৭) ওই গ্রামের মৃত. আব্দুল খালেকের ছেলে ও তেরাস্তা বাজার কমিটির সভাপতি।
বৃহস্পতিবার হস্তান্তর কালে উপজেলা আওয়ামী লীগের ধুবড়িয়া তেরাস্তার মো. জাকিরুল ইসলাম উইলিয়ামের অফিসে পরিবারের সকলকে পেয়ে আনন্দে আপ্লূত হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে দূর্গা। দেশজুড়ে যখন ধর্ষণ এক আলোচিত সংবাদ। ঠিক তেমনি একটা মুহূর্তে এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রনি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন নারীটিকে ২০১০ সালের দিকে ধুবড়িয়া ইউনিয়নের ডিজিটাল বলরামপুর বাজার, পুরাতন বাজার, ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজারে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে দেখা যায়। ওই নারীকে স্থানীয় লোকজন তার নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করলে সে কিছুই বলতে পারতো না। ভারসাম্যহীন নারী আশ্রয় নেয় ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজারে। এরপর থেকে ওই নারীর লালন পালনের দায়িত্ব নেন স’মিল মালিক রনি। নাম পরিচয়হীন নারীর নাম রাখেন লাইলী। আর পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য খুঁজতে থাকেন ঠিকানা ও পরিচয়।
অবশেষে দীর্ঘ ১১ বছর পর ওই নারীর পরিবারের সন্ধান পান তিনি। আর জানতে পারেন লাইলীর আসল নাম দূর্গা রানী। তার স্বামী রমেশের বাড়ি দিনাজপুরের সস্তীতলা শহীদুল কলোনি। বাবার বাড়ি বগুড়া জেলার সান্তাহারের সুইপার কলোনিতে। দূর্গা রানী ওই কলোনির রতন হরিজনের মেয়ে।
স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে আসা রমেশ জানান, হারিয়ে যাওয়া আগে কিছু মানসিক সমস্যা দেখা দেয় দূর্গার। এ সময় নানান ধরণের ওষুধ খাওয়ান তিনি। এরই মাঝে ১১ বছর আগে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হন তার স্ত্রী। এরপর থেকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হারিয়ে যাওয়া ভারসাম্যহীন বোন দূর্গাকে ফিরে পেয়ে ভাই নাদিম হরিজন, আরমান হরিজন, শাকিল হরিজন, প্রদীপ হরিজন, রিপন হরিজন বলেন, প্রায় ১১ বছর রনি ভাই আমাদের বোনকে সযত্নে লালন পালন করে আজ আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এটা মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। আমাদের বোনকে ফিরে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। রনি ভাইকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই।
অশ্রুসিক্ত নয়নে আশ্রয়দাতা রনি জানান, ১১ বছর যাবত মেয়েটির পরিচয় ও পরিবারের সন্ধান পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়েছি। অবশেষে ও কোন উপায় না পেয়ে তার ফেসবুকে মেয়েটির সন্ধান পেতে ছবি সম্বলিত একটি পোষ্ট দেই। ফেসবুকের সুফলে পাওয়া যায় মেয়েটির পরিবারের সন্ধান।
তিনি আরও বলেন, মেয়েটিকে তার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। মেয়েটি যেন বাকি জীবনটা তার পরিবারের সাথে সুখে শান্তিতে কাটাতে পারে। সৃষ্টিকর্তার নিকট সেই প্রার্থনা করি। সেইসাথে তিনি এটাও বলেন, দূর্গার সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে সকল প্রকার সাহায্য সহায়তা করবেন তিনি।
নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. আওলাদ হোসেন লিটন বলেন, আমরা যে কাজটি করতে পারিনি রনি তা করে দেখিয়েছে। মানবতা আজও বেঁচে আছে এটা তারই সাক্ষ্য বহন করে। দিনাজপুরে বসবাসকারী আমার ভাই দীলিপ এর সাথে দূর্গা (লাইলী) এর বিষয়ে আলাপ করি। আমার ভাই দীলিপ তার ফেসবুকে দূর্গা ছবি পোষ্ট করলে তার ফেসবুকের শতশত বন্ধুরা সেটি শেয়ার করে। ফেসবুকের পোষ্টই নিশ্চিত হয় দূর্গা (লাইলী)র পরিচয়। এরপর দিনাজপুরের হরিজন সম্প্রদায়ের নেতারা দীলিপের সাথে যোগাযোগ করে।
Leave a reply