আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:
মালয়েশিয়ায় করোনা মহামারি রোধে চলছে লকডাউন। দেশটির সরকারের কড়া বিধিনিষেধের মাঝেও দূতাবাসের পাসপোর্ট বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
মালয়েশিয়ার সরকার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম-এসওপি ঘোষণার মাধ্যমে অধিক গণজমায়েতকে নিষিদ্ধ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাতে দ্রুত পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে সরকারের বিধিনিষেধ মেনে লকডাউনের মধ্যে গত তিনদিনে প্রায় আড়াই হাজারেরও অধিক পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে বলে দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া অতি সম্প্রতি বিধি নিষেধের মধ্যেও তিন প্রদেশে প্রায় দেড় হাজারেরও অধিক পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মালয়েশিয়ায় ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের আজ ৩য় দিন অতিবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া যারা লকডাউন (এসওপি) অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া লকডাউনের মাঝেও বাড়ছে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২১১ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন। সর্ব মোট মালয়েশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫১ হাজার ৬৬ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৫৮৬ জন।
গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে মালয়েশিয়ায় চলছে বিধি নিষেধ। সরকার বাধ্যতামূলক আরোপ করে রেখেছে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্বসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ। এ বিধি নিষেধের মধ্যেই পাসপোর্ট কার্যক্রম সময়োপযোগী করতে অ্যানালগ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসীদের পাসপোর্ট প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দূতাবাসের কর্মীরা পাসপোর্ট বিতরণ করে যাচ্ছেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন কর্মক্ষেত্রে সঠিক সময়ে ভিসা রিনিউ করতে পারেন সে লক্ষ্যে সব নীতিমালা অনুসরণ করে ছুটির দিনসহ দূতাবাস কর্মীরা অবিরাম দিন-রাত কাজ করে করোনার মধ্যেও প্রায় এক লাখ ৩০ হাজারেরও অধিক পাসপোর্ট বিতরণ করেছে। এ ছাড়া পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও অন্যান্য সেবা নিয়মিত দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান লকডাউন ঘোষণার আগে শনিবার ও রোববার মালয়েশিয়ায় সরকারি ছুটি। এই দুইদিন দূতাবাসের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রবাসীদের দ্রুত পাসপোর্ট সেবা নিশ্চিত করতে পাসপোর্ট সার্ভিস শাখার কর্মীরা নিরলস কাজ করেছেন।
এদিকে, মালয়শিয়ায় গত নভেম্বর থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া রিক্যালিব্রেশন নামে বৈধকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্ক্রিয়ায় বৈধ হতে নতুন পাসপোর্টের আবেদন বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ। বিদেশি দূতাবাসের মধ্যে একমাত্র মালয়েশিয়া ডাকযোগে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ চালু রেখেছে। পাসপোর্ট বিতরণে অনলাইন বুকিং সিস্টেমসহ পাসপোর্ট সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানের বিষয়টি সহজ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাসপোর্ট অ্যান্ড ভিসা শাখার প্রধান মো. মশিউর রহমান তালুকদার জানান, মালয়েশিয়া সরকার একটানা লকডাউন ঘোষণার পাশাপাশি কন্ডিশনাল মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (সিএমসিও), স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম (এসওপি) জারি রেখেছে। এসব সরকারি বিধিমালা অনুসরণ করে পাসপোর্ট সার্ভিস স্বাভাবিক রাখা কঠিন চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্র স্বাভাবিক ও নিবিড় করতে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং দ্রুত পাসপোর্ট বিতরণে দূতাবাস আন্তরিকভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে সেবা দিতে গিয়ে হাইকমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা রয়েছেন কোয়ারেন্টাইনে। তারপরেও ঝুঁকি নিয়ে সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাসপোর্ট শাখার প্রধান মশিউর রহমান তালুকদার।
মালয়েশিয়ায় নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, পাসপোর্ট দ্রুত ডেলিভারি দিতে ইতোমধ্যে হাইকমিশনে ছয়জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং আরও লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মালয়েশিয়া পোস্ট অফিসের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে, যাতে করে দূরে কর্মরত কর্মীদের কাছে সহজে পাসপোর্ট পৌঁছে দেয়া যায়।
বৈধকরণ নিয়ে রাষ্ট্রদূত জানান, রিকেলিব্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিয়োগদাতা বা মালিক নির্ভর। না জেনে না বুঝে কারো সঙ্গে আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি চলমান লকডাউনে সরকারের বেধে দেয়া বিধিনিষেধ পালনেরও প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহবান জানান রাষ্ট্রদূত গোলাম সারওয়ার।
ইউএইচ/
Leave a reply