রাশিয়ার গোয়েন্দাদের ৪০ বছরের সাধনার ফল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প!

|

রুশ গোয়েন্দাদের নজরে পড়া সেই সময়ের ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম খ্যাপাটে প্রেসিডেন্ট ধরা হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। নির্বাচনে হেরে রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট বিদায় নিয়েছেন বটে, তবে তাকে ঘিরে আলোচনায় ভাটা পড়েনি এতটুকু। আলোচনার পালে নতুন করে হাওয়া লাগিয়েছেন সাবেক কেজিবি এজেন্ট ইউরি শভেৎস। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি জানান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি’র ৪০ বছরের সাধনার ফল ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প’। ১৯৭৭ সালে কেজিবি’র নজরে পড়েন ট্রাম্প।

ঘটনার সূত্রপাত, যখন চেক মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে বিয়ে করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় রুশ গোয়েন্দাদের নজরে পড়েন তিনি। এরপর নানা সময়ে তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে তারা। এই প্রচেষ্টার চূড়ান্ত ফল আসে ৪০ বছর পর, ২০১৬ সালে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন ট্রাম্প।

সাবেক রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইউরি শভেৎসের দাবি, ট্রাম্পের বিজয়কে বড় ধরনের অর্জন হিসেবে বিবেচনা করেছিল মস্কো। সেখানে তৈরি হয়েছিল উৎসবের আমেজ।

ইউরির তথ্য ওপর ভিত্তি করে ‘আমেরিকান কমপ্রোম্যাট’ নামে একটি বই লিখেছেন মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক ক্রেগ আঙ্গার। সেখানে উঠে এসেছে ট্রাম্পের নানা অজানা তথ্য। প্রশ্ন জাগতে পারে কীভাবে এত তথ্য দিলেন ইউরি? আশির দশকে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাসের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে কর্মরত ছিলেন ইউরি শভেৎস। এটি ছিল তার ছদ্মবেশ। আদতে কাজ করতেন কেজিবির এজেন্ট হিসেবে। তবে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস শুরু করেন ইউরি। পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও। ৬৭ বছর বয়সী সাবেক এই এজেন্ট এখন বাণিজ্যিক নিরাপত্তা তদন্তকারী হিসেবে কাজ করছেন। মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার সুবাদে এত গোপনীয় তথ্য ফাঁস করতে পেরেছেন তিনি।

দ্য গার্ডিয়ানকে ইউরি জানান, কেজিবি গোয়েন্দাদের একটি কৌশল ছিল সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী অথবা তরুণদের তাদের আওতায় নিয়ে আসা। কারণ, একসময় তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম। ট্রাম্পও এই প্রকল্পের আওতাধীন ছিলেন।

চেক মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে বিয়ে করার পর চেকস্লোভাকিয়া ও কেজিবি যৌথভাবে ট্রাম্পকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজায় বলে দাবি ইউরির। ট্রাম্পকে প্রথমে সম্ভবনাময়ী হিসেবে খুঁজে বের করেন কিসলিন নামের এক এজেন্ট। রুশ নাগরিক কিসলিন তখন নিউইয়র্কের ফিফথ অ্যাভিনিউর জয়–লুড ইলেকট্রনিকসের অন্যতম মালিক ছিলেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম বিয়ের তিন বছর পর ট্রাম্প তার আবাসন ব্যবসায় প্রথম বড় কাজে হাত দেন। নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছে তার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে গ্র্যান্ড হায়াত নিউইয়র্ক হোটেল। এই হোটেলের জন্য ট্রাম্প কিসলিনের প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০টি টেলিভিশন সেট কিনেছিলেন।

১৯৮৭ সালে ট্রাম্প ও ইভানা প্রথমবারের মতো মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গ ভ্রমণ করেন। ইউরি গার্ডিয়ানকে জানান, সেই ভ্রমণেই কেজিবির গোয়েন্দারা ট্রাম্পের মাথায় ‘রাজনীতির ভূত’ ঢুকিয়ে দেয়। পাশাপাশি, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে তারা। তোষামোদপ্রেমী ট্রাম্পকে কেজিবি’র গোয়েন্দারা বোঝায় তার যোগ্যতম পদ ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট’ই বটে!

এতে ট্রাম্প এতটাই মজে যান যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেই রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেন। নিউ হ্যাম্পশায়ারে পোর্টসমাউথে তিনি একটি সমাবেশও করেন সে সময়। ১৯৮৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও বোস্টন গ্লোবের মতো সংবাদপত্রে পুরো পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন দিলে বসে ট্রাম্প যেখানে মার্কিন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতি নিয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরেন তিনি। এতে জাপানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে শোষণের অভিযোগও তোলেন তিনি। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোয় যুক্তরাষ্ট্রের থাকা নিয়েও আপত্তির কথা তুলে ধরেন ট্রাম্প। এমন কর্মকাণ্ডে খুশি হয় কেজিবি।

ইউরির দাবি, ট্রাম্পের মতো এমন অনেক লোককেই লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল কেজিবি। এবং ট্রাম্পের মতো আরও অনেকের পেছনেই ছুটছিল তারা। কিন্তু ট্রাম্প ছিল নির্ভুল লক্ষ্য। ঠিকই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে দেখিয়েছেন তিনি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply