স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:
নেত্রকোণায় মুজিব বর্ষে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘর হস্তান্তরের আগেই দেখা দিয়েছে ফাটল। স্থানীয়দের অভিযোগ, অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়মের কারণে ঘরে উঠার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘর।
এরিমধ্যে জেলার পূর্বধলা উপজেলার খলা গ্রামে নির্মিত ঘরে ফাটল দেখা দেয়ায় উপকারভোগীদের মাঝে ছড়িয়েছে আতঙ্ক।
স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীদের সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার ধলা গ্রামে মুজিববর্ষে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিষয়টি জানাজানির পর তড়িঘড়ি করে ফাটল বন্ধের চেষ্টা করেছে
স্থানীয় প্রশাসন। পূর্বধলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের খলা গ্রামে নির্মিত বারোটি ঘর রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ।
এদিকে, ফাটলের বিষয়টি দেখে উপকারভোগীদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়মের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘর। এই অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিচার চাইলেন স্থানীয়রা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রথম দফায় ঘর ও জমি পাচ্ছেন মোট ৯’শ ৬০ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র মানুষ। প্রত্যেকের নামে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে দুই শতক করে খাসজমি। আর তাতে ঘর নির্মাণ বাবদ ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার করে টাকা। যার পুরোটাই বহন করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। নির্মিত ১৯ দশমিক ৬ ফুট বাই ২২ ফুটের দুটি শয়নকক্ষ, একটি রান্না ঘর, সংযুক্ত পায়খানা-গোসলখানা ও সামনে বারান্দাসহ রঙিন টিনের ছাউনি দ্বারা এসব ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হবে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। জেলার ১০টি
উপজেলার মধ্যে জেলা সদরে ৪৩টি, বারহাট্টায় ৪৫টি, আটপাড়ায় ৯৮টি, পূর্বধলায় ৫৩টি, দুর্গাপুরে ৩৫টি, কেন্দুয়ায় ৫০টি, কলমাকান্দায় ১০১টি, মদনে ৫৬টি, মোহনগঞ্জে ৩৬টি এবং হাওর উপজেলা খালিয়াজুরিতে ৪৪৩টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে।
উপকারভোগী বিউটি আক্তার, রবিকুল মিয়া, দুদু মিয়া ও সুমন মিয়া বলেন,
‘আগে তারা কইছে ঘরো উঠতাম, অহন ঘরে ফাডা দেইখ্যা কয় উঠতাম না।
বাইষা মাস গেলে আইতাম। আমার তিনডা বাচ্ছা (ছেলে-মেয়ে) এরারে লইয়া
এই ঘরে থাকতাম না। দেওয়াল ভাইঙ্গিয়া মইরা যাইবাম।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, ‘ঘরগুলো নির্মাণের আগে মাটি কাটা হয়। কিন্তু মাটিগুলো সমান করা হয়নি। মাটিতে ফাঁক থাকায় এখন ঘরের ওয়াল, ফ্লোর ফেটে যাচ্ছে। এগুলো খুব বিপদজনক হয়ে গেছে। এখন এগুলোতে বসবাস করা যাবে না। বর্ষায় বৃষ্টি শুরু হলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
নতুন মাটি দেবে ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানায় প্রকল্পের কাজে জড়িত
কর্মকর্তারা। আগামী বর্ষায় পরিস্থিতি দেখে তারপর ঘর ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
পূর্বধলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শুনেছি দলিলের সময় বারোশ করে টাকা নেয়া হয়েছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি, তারা বলেছেন বরাদ্দ পেলে তাদের
টাকা ফিরিয়ে দেব। মাটি কাটার পর তাড়াতাড়ি ঘরগুলো নির্মাণ করার কারণে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সঠিক নিয়মে ঘরগুলো নির্মাণ কাজ করা হয়েছে।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, অনিয়মের কথা অস্বীকার করে ঘর সঠিক নিয়মে করা হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, মাটি দেবে ঘরে
ফাটল দেখা দিয়েছে। আমি গত কাল সন্ধ্যায়ও (বৃহস্পতিবার) গিয়েছি। মাটির সমস্যার জন্য এমন হয়েছে। কাজ এখনো চলমান রয়েছে। ফাটা স্থান গুলো ঠিক করা হচ্ছে। ঘরের কাজ শেষ হলে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা
হবে।
ইউএইচ/
Leave a reply