ভোটের আগেই নৌকা প্রার্থীর মাঠ দখলের চেষ্টা, ভোটাররা আতঙ্কিত

|

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনসহ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কয়েকটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পরাজয় হওয়ায় কলাপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিজয় পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীসহ বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীকে ঠেকাতে নানা সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিয়ে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এতে আসন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সাধারণ ভোটারদের মনে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর সমর্থক কর্তৃক সৃষ্ট অরাজকতা এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ দেয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন তৎপরতা না থাকায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদার উদ্দিন মাসুম ব্যাপারীর একাধিক লিখিত অভিযোগে প্রকাশ, ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে ৬নং ওয়ার্ড এ তার জগ প্রতীকের প্রচারণা চালানোর সময় তার স্ত্রী হাছিনা আক্তার আহমেদ এবং পরিবারের আরও ৪ সদস্যের টিমকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের সমর্থক রাকিবুল ইসলাম রাকিবসহ অজ্ঞাতনামা ৪ থেকে ৫ জন মিলে প্রকাশ্য দিবালোকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়, হাত পা কেটে দিয়ে পঙ্গু করে ফেলার হুমকি প্রদান করে।

তিনি জানান, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার জন্য সংসদ সদস্য, জেলা, উপজেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে চাপ প্রয়োগ করা হয়। পরে তাকে নির্বাচনের মাঠ থেকে বসাতে না পেরে ২৬ জানুয়ারি রাতে তার সমর্থক রাকিবুল ইসলাম দীপ্তকে (২২) হত্যার চেষ্টায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের সমর্থক শহর ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান শুভ ও তার সহযোগী আলিফ মাহমুদসহ তাদের সঙ্গীরা।

এছাড়া গত ২৮ জানুয়ারি শব্দ যন্ত্রের মাধ্যমে জগ প্রতীকের প্রচার কার্যে ব্যবহৃত ২বার মেমরি কার্ড খুলে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া, গত ২৯ জানুয়ারি টাঙ্গানো পোস্টার ছিঁড়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয়া, গত ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টার সময় ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় তার মহিলা আত্মীয়-স্বজন নির্বাচনী ক্যাম্পাইনে গেলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের অন্যতম সহযোগী মো. মাসুম প্যাদা, মো. নাসির প্যাদা, মো. জাহিদ মীরা, মো. হাবিবসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জন মিলে ব্যাপকভাবে আজেবাজে কথা বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, হাত পা ভেঙ্গে দেয়া এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এলাকা থেকে বের করে দেয়া, গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে বিপুল সংখ্যক বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে নিয়ে এসে প্রতিদিনই মোটরসাইকেল সহযোগে কলাপাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তায় মহড়া করে বেড়াচ্ছে। এমনকি তাকেও প্রচারণায় বাধা প্রদানসহ গালিগালাজ করা হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার রাতে একটি ঝটিকা মিছিল বের করে বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে উপজেলা যুবদলের সভাপতি আক্কাস গাজীকে বেদম মারধর করে নৌকা সমর্থিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পৌঁছে দেয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে শহরের সবুজ বাগ এলাকায় তার বাসায় হামলা করে ভাঙচুর চালায় নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠে সন্ত্রাসী হামলায় পণ্ড হয়ে যায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. হুমায়ুন কবিরের নির্ধারিত উঠান বৈঠক।

বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন অভিযোগ
করেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দুই শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী পুলিশি বাঁধা উপেক্ষা করে উঠান বৈঠক বানচাল করার জন্য ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে সভা পণ্ড করে দেয়। এ সময় কলাপাড়া পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক সিকদার জুয়েল ইকবালসহ ৮-১০ জন বিএনপি সমর্থক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিপুল চন্দ্র হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এসব গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। সমর্থকদের উত্তেজনায় দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে যার জন্য দল বা আমি দায়ী নই।

কলাপাড়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও পটুয়াখালী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান খলিফা জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তার দাবি, ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্নের জন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা গ্রহণ করা হবে।

কলাপাড়া থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রাপ্য অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত চলমান রয়েছে। এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য কলাপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে চার জন, পুরুষ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন এবং মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে মোট ভোটার ১২হাজার ৮৯১জন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply