টেকসই উন্নয়নে কৃষি ও পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

|

দেশের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। দিনকে দিন শিল্প-কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। সেইসাথে কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রূপরেখায় কৃষি ও পরিবেশ উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব পাচ্ছে।

উন্নয়নের মডেল অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০২১ সালে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশের পুরো কৃষিখাত আধুনিক হয়েছে। সেটা যেমন হয়েছে বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি ক্ষেত্রে; ঠিক তেমনি হয়েছে চাষ, সেচ, বীজ রোপণ, কর্তন, মাড়াই ও প্যাকেট-জাত ইত্যাদি ক্ষেত্রেও। এছাড়া কৃষিভিত্তিক শিল্পও গড়ে তোলা হয়েছে প্রয়োজন মোতাবেক।

আমি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ২০১১ সালে যোগ দেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই থেকে পাঠ্যপুস্তকের মলাটে নিজেকে বেঁধে না রেখে, যুক্ত হয়েছি নানান সামাজিক কার্যক্রমে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে যোগদান করি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি আর্থকেয়ার ক্লাব’র সাথে। প্রথম কাজ ছিল ধানমণ্ডি লেক এলাকায় ময়লা ফেলার বাক্স স্থাপন করা। বর্তমান সময়ে যেমন বিভিন্ন কোম্পানির ময়লা ফেলার বাক্স চোখে পড়ে, বছর পাঁচেক আগে এমন দৃশ্য ছিল না। তাই এখানে প্রথমে ময়লা ফেলার বাক্স রাখার উদ্যোগ নেয় আর্থকেয়ার ক্লাব।

ক্লাবের প্রধান সমন্বয়ক এবং অন্যান্য সদস্যের সাথে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে কাজ কাজ করি। তখনকার মস্ত এই আয়োজনের যোগাযোগ ও গণসংযোগের দায়িত্ব ছিলাম আমি। এছাড়াও বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি, স্কুল-কলেজে পরিবেশ বিষয়ক প্রশ্ন নিয়ে কুইজ অনুষ্ঠান, পরিবেশ বিষয়ক মঞ্চ নাটিকা কিংবা প্ল্যাকার্ড হাতে শব্দদূষণ রোধের জন্য মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিতে ক্লাবের পক্ষ থেকে অংশ নিয়েছি বহুবার।

ঢাকার রাস্তায় নিত্য যাদের চলাচল, তারা জানেন এখানে শব্দদূষণের ব্যাপকতা কীরূপ। হাসপাতাল কিংবা স্কুলের সামনেই হোক না কেন, খামখেয়ালি আর স্বেচ্ছাচারী চালকদের হাতে পড়ে বিরাম নেই হর্ন যন্ত্রের। ৪৫ ডেসিমেলের ওপর হর্ন বাজানো যাবে না’, ‘স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো যাবে’ না কিংবা ‘প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক হর্ন বাজানো উচিত নয়’- শব্দদূষণ কমাতে প্রতিটি গাড়ির সামনে গিয়ে ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ডে লেখা এ কথাগুলো আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করি। গল্পে গল্পে চালকদের বোঝানোর চেষ্টা করি শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক।

পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন যেমন বাপা, পবা, সবুজপাতা, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ, বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার ইত্যাদি সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে পরিবেশ সহায়ক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। সেখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি যা আমার ব্যক্তি ও কর্মময় জীবন উভয় ক্ষেত্রেই কাজে লাগছে।

পণ্য কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় গাছের গায়ে লোহা পিটিয়ে একটি বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে দেয়ার গল্পটা অনেক পুরনো। বিশেষ করে ঢাকার রাস্তায় হরহামেশা এমন দৃশ্য নজরে পড়বে পথচারীদের। ২০১৩ সাল থেকে ধানমণ্ডি এলাকার গাছ থেকে এমন কিছু বিজ্ঞাপন খুলে ফেলেছেন সবুজপাতা, বাপা, আর্থকেয়ার ক্লাবসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা যেটা মনে খুব দাগ কেটেছে।

এছাড়া এসিআই’তে কর্মজীবনের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক এনজিও সুইসকন্টাকের সাথে একটা জয়েন্ট প্রোজেক্ট কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম যেখানে আমি প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছি। তখন যমুনা নদীর চর এলাকায় কৃষি উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কৃষকের সাথে মেশার সুযোগ হয়েছিল। তাদের জীবনযাত্রার মান দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তার কয়েক বছর পর অবশ্য ভালো লেগেছিল এই দেখে যে এসিআই তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল।

এছাড়া আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ক্লাবের সাধারণ সদস্য থেকে গণসংযোগ সম্পাদক, কার্যনির্বাহী সদস্য এবং সবশেষে হয়েছি ক্লাবের সভাপতি। পেয়েছি সেরা স্বেচ্ছাসেবকের পুরষ্কার। এখনও কাজ করে যাচ্ছি যেটা আমাকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জিনিস শিখতে সাহায্য করছে এবং সোশ্যাল ক্যাপিটাল বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে যাচ্ছে। এর ফলে কৃষি নিয়ে কাজ করার জন্য টেকসই উন্নয়নে কৃষি ও পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করছি।

লেখক:
মো: আশরাফুল আলম
পরিবেশ কর্মী ও সংগঠক।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply