নারী মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা আর নেই

|

পাবনা প্রতিনিধি:

পাবনার তালিকাভুক্ত ও জীবিত একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা মারা গেছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে জেলার সাঁথিয়া উপজেলার তেঁথুলিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।

মৃত ভানু নেছার নাতী শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, হৃদক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পর দশ বছর আগে চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন ভানু নেছা। এরপর গত তিন বছর ধরে একেবারেই শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। জীবনের শেষ সময়ে এসে কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছিলেন। তরল খাবার ছাড়া কিছু খেতে পারতেন না।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তেঁথুলিয়া কবরস্থানে তার জানাজা নামাজ শেষে দাফন করা হয়। তার আগে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভানু নেছাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় । এসময় সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহমেদসহ মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ অংশ নেন।

উল্লেখ্য, নারী হয়েও দেশ মাতৃকার স্বাধিকার আন্দোলনে জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নের তেঁথুলিয়া গ্রামের আব্দুল প্রামাণিকের স্ত্রী ভানু নেছা। মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙ্কারে গোলাবারুদ সরবরাহ, সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধে রেখেছিলেন অসামান্য ভূমিকা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাবনার সাঁথিয়ায় বিভিন্ন সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন নারী মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা। সে সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোলা-বারুদ মাথায় করে মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙ্কারে বাঙ্কারে পৌঁছে দিতেন তিনি। একবার তিনি গুলিতে আহতও হয়েছিলেন। যার ফলস্বরুপ তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং নিয়মিত ভাতা প্রাপ্ত পান। ১৯৯৬ সালে পাবনায় ও ঢাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে তাঁকে সম্মানিত করা হয়।

সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল লতিফ জানান, একাত্তরে নন্দনপুরে যখন পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমরা বাঙ্কারে ছিলাম। ঠিক ওই সময় এই ভানু নেছা আমাদের অনেকভাবে সহযোগিতা করেছিল। আমাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে আমি তাকে চিঠি লিখে সাঁথিয়া থানায় গিয়ে গোলাবারুদ আনতে বলেছিলাম। তখন সে কোমরে কাপড় বেঁধে থানা থেকে গোলাবারুদ নিয়ে আমাদের দিয়েছিল।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply