‘মহারাজা! তোমারে সেলাম’

|

পঞ্চাশের দশকে সত্যজিৎ রায় লন্ডনে গিয়ে কোনো এক কারণে চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন। সেবার বেড়াতে গিয়ে তিনি প্রচুর ছবি দেখেছিলেন। এসব ছবির মধ্যে ইতালীয় পরিচালক ভিত্তোরিও ডি সিকোর বিখ্যাত ছবি ‌‌বাইসাইকেল থিভস্ তাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছিলো। এই ছবিটা দেখার পরই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে তিনি চলচ্চিত্রকার হবেন। সেই থেকে শুরু। সত্যজিৎ নির্মাণ করলেন তার অমর চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী (১৯৫৫)। এরপর সারাজীবনে একে একে আরও একত্রিশটি ছবি এবং চারটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন সত্যজিৎ রায়।

সত্যজিৎ রায় কেবল যে বাংলা চলচ্চিত্রেরই বরপুত্র ছিলেন তা নয়, সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা- কী করেননি তিনি। আর যা করেছেন, তাতেই করেছেন বাজিমাৎ।

সত্যজিৎ রায় ১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। বাবা সুকুমার রায়, মা সুপ্রভা দেবী। মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। সত্যজিতের প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি মায়ের কাছে । ১৯২৯ সালে আট বছর বয়সে বালিগঞ্জ সরকারি স্কুলে পড়াশোনার শুরু। ১৯৩৬ সালে ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। দুই বছর বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে শেষ বছরে এসে বিষয় পাল্টে অর্থনীতি পড়তে শুরু করেন। তারপর মায়ের উৎসাহে ১৯৪০ সালে শান্তিনিকেতনে চারুকলায় ভর্তি হন সত্যজিৎ। শান্তিনিকেতনে পড়ার সুবাদে তিনি বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু ও বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়কে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন।

অমর এই সাহিত্যিকের সমগ্র সাহিত্যকর্মে শিশু কিশোরদের জন্য একটা বিশেষ জায়গা ছিল। তার নির্মিত চরিত্র ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু- প্রভৃতি এত এত দশক পরেও শিশু সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্রের স্থান দখল করে আছে।

সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালে পথের পাঁচালী ছবিটির জন্য অস্কার লাভ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, কান পুরস্কার, ভারত রত্ন সহ অনেক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন। সত্যজিৎ রায় তার চার দশকের কর্মজীবনে মোট পঁয়ত্রিশটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

আজ ২ মে। বাংলা শিল্প-সংস্কৃতির জগতে তার অবদান অনস্বীকার্য। একাধারে এই চলচ্চিত্রকার, সংগীত পরিচালক, চিত্রশিল্পী, প্রকাশক, সম্পাদক, সাহিত্যিক এবং বিশেষত শিশু সাহিত্যিকের আজ শততম জন্মবার্ষিকী।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply