ফলোঅনে পড়ার পরেও বাংলাদেশের প্রতি দয়া দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে না পাঠিয়ে নিজেরাই ব্যাটিংয়ে নেমে পড়েছে। ভাগ্যিস এই স্ট্রাটেজি নিয়েছিল তারা। তা না হলে তো ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতো বাংলাদেশের। এখন অন্তত বলা যাবে, ওই টেস্টে ৪৩৭ রানের বড় টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২২৭ রানে অল আউট হয়েছিলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে লঙ্কানদের বিপক্ষে টাইগাররা হেরেছে ২০৯ রানে।
দ্বিতীয় টেস্টের আগাগোড়ায় যেন ভুলের আখ্যান রচনা করেছে টাইগাররা। টস ভাগ্যও ছিলো বিপক্ষে। টিম ম্যানেজমেন্ট জানতো, দ্বিতীয় টেস্টের উইকেট প্রথম টেস্টের মতো হবে না। স্পিনিং উইকেট হবে, বোলাররা সহযোগিতা পাবেন কিন্তু এমন খবর জানার পরেও তিন পেসার নিয়ে মাঠে নামলেন মুমিনুল হক। ফলাফল, প্রথম ইনিংসে পরিকল্পনাহীন বোলিং করে গেছে টাইগাররা। ৪৯৩ রান করার পর লঙ্কানরা ইনিংস ঘোষণা করার সময় হয়তো বুঝতেই পেরেছিল, এই উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের অগ্নিপরীক্ষায় ফেলতে পারবে তারা।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল আশা জাগিয়েছিলো বেশ, যদিও এই ইনিংসেও সে সেঞ্চুরি মিস করেছেন। আগের টেস্টে আউট হয়েছিলেন ৯০ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন ৭৪ রানে। এই টেস্টেরও প্রথম ইনিংসে তামিম আউট হলেন ৯২ রানে। এরপর মুমিনুল আর মুশফিক মিলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন কিন্তু সেটি হয়নি দুজন সেট ব্যাটার আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন অতি সাধারণভাবে। শান্ত আর সাইফের কথা না হয় নাই বলা হলো।
শেষ ৭ ব্যাটার আউট হয়েছেন মাত্র ৩৭ রানে। তার মধ্যে তাইজুলের আউটটি তো বহুদিন মনে রাখবে মানুষ। জুতো খুলে উইকেটে লেগে বেল পড়ে যায় আর তাতেই হিট উইকেটে পরিণত হন তাইজুল। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস শেষ হয় ২৫১ রানে।
অভিষেক হওয়া শ্রীলঙ্কান স্পিনার নিজের ক্যারিয়ার শুরুর টেস্টে যখন দুর্দান্ত বল করে স্পিনের জাদুতে ৬ বাংলাদেশী ব্যাটারকে ফাঁসিয়েছেন যে উইকেটে, সেই উইকেটেই বাংলাদেশের মিরাজ তাইজুল পাত্তাই পাননি বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য তাইজুল নিয়েছেন ৫ উইকেট। আর মিরাজ পেয়েছেন দুটি। ম্যাচের একটা পর্যায়ে ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন বিক্রমা যেমন টার্ন পেয়েছেন তাইজুল মিরাজ সেটা পাচ্ছেন না এর অন্যতম কারণ, তারা জোরের ওপর বল করছেন, সামান্য একটি ফ্লাইট দিয়ে বল করলেই বড় টার্ন পাবে তারা। হয়তো সেই কথা শুনেই বোলিংয়ের ধরন পরিবর্তন করেছিলেন তাইজুল। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ১৯৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। আগের দিনের লিড ২৪২ রান আর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৩ রান মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে জয়ের জন্য ৪৩৭ রানের বিশাল টার্গেট দেয় লঙ্কানরা।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে এতটাই তাড়াহুড়ো করছিলো বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেন টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে ফরম্যাটের ক্রিকেট খেলছেন তারা। লঙ্কান বোলাররা যতটা না উইকেট নিলো, তারচেয়ে বেশি উইকেট দিয়ে আসলো বাংলাদেশের ব্যাটাররা। চতুর্থ দিন শেষে ১৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের প্রহর গুনতে শুরু করে বাংলাদেশ। জানা ছিলো পঞ্চম দিনে প্রথম সেশনেই বাংলাদেশ হারের স্বাদ পাবে কিন্তু কত রানে হারবেন টাইগাররা সেটা জানা ছিলো না। টাইগাররা মাঠ থেকে উঠে যেতে খুব বেশি সময় নেননি। মাত্র পঞ্চাশ রানের মধ্যেই বাকি ৫ উইকেট হারিয়ে সিরিজ লঙ্কানদের হাতে ট্রফি তুলে দিয়ে আসে মুমিনুলের দল। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট নিয়েছেন বিক্রমা।
Leave a reply