বিনা অপরাধে ভারতে দশ বছর ধরে জেল খাটছেন বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজি। কোন অপরাধ না করেও খুনের মামলায় যাবজ্জীবন দন্ড পেয়েছেন হতভাগ্য বাদল। অথচ হত্যাকান্ডের সময় তিনি ভারতেই ছিলেন না। ঢাকা-দিল্লি, সবখানে যোগাযোগ করেও মুক্তি মেলেনি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, তথ্য প্রমাণ ভারত সরকারকে পাঠালেও এখনও তা আমলে নেয়া হয়নি।
বাগেরহাটের মংলার সাধারণ পরিবারের ছেলে বাদল ফরাজি। বাগেরহাটের মংলা বন্দরের কাছে ১৭ নম্বর ফারুকি রোডের বাসিন্দা আবদুল খালেক ফরাজি ও সারাফালি বেগমের পুত্র এই বাদল ফরাজি।
২০০৮ সালের ১৩ জুলাই তাজমহল দেখতে যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন ১০ বছর আগে। প্রবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খুনের মামলায় তাকে আটক করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা গেছে, এ ঘটনার কয়েক দিন আগে দিল্লির অমর কলোনিতে খুন হন নির্মলা মদন নামের এক বৃদ্ধা। সন্দেহভাজন হত্যাকারী হিসেবে গৃহপরিচারক বাদল সিং-এর দেশ ত্যাগে সীমান্তে সতর্ক করা হয় বিএসএফকে। ‘বাদল’ নামের প্রথম অংশটি মিল যাওয়ায় হরিদাসপুরে বাংলাদেশি যুবক বাদলকে আটক করে বিএসএফ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালের জুলাইয়ে Y220271 নম্বর পাসপোর্টে বৈধ ভ্রমণ ভিসা নিয়ে ভারতে যান বাদল ফরাজি। আর হত্যার ঘটনাটি ঘটে মে মাসে। অর্থাৎ ঘটনার সময় বাদল বাংলাদেশ ছিলেন। কিন্তু ভাষা, পুলিশ ও আইনি মারপ্যাচে তিহার জেলে যেতে হয় তাকে।
পরে খুনের মামলার রায়ে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদল ফরাজিকে দিল্লির সাকেত আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে আপিল করা হলেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকে। রায়ের পর থেকে তিহার কারাগারে জীবন কাটছে তাঁর।
এদিকে বাদল ফরাজি দেশে যোগাযোগের উপায় না পেয়ে জেল থেকে চিঠি লেখেন ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারকে।
ঢাকার টনক নড়ে আরো অনেক পরে। ৪ বছর পর ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিস্তারিত জানতে দিল্লী দূতাবাসকে চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জবাবে ঘটনার সত্যতা স্বীকারও করে দূতাবাস। তারা জানায়, ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বাদল। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় নথি চান ভারতের আদালত। কিন্ত পরের ৬ বছরেও দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায়, এখনো কারাগারেই দিন কাটছে বাদল ফরাজির। কারাগার থেকে মুক্তির স্বাদ পাননি বাদল।
অন্যদিকে গেল ১০ বছর ছেলের দেখা না পেয়ে নির্বাক মা। দাদী শয্যাশায়ী। মাঝে মারা গেছেন বাদলের বাবাও। তাই এখন যে কোনো উপায়ে পরিবারের ছোট ছেলেকে ফেরত চান স্বজনরা। বাদলের মা বলেন, আমি গরিব মানুষ, কিভাবে যামু কিভাবে ফেরত আনমু, আপনারা আমার ছেলেকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করে দেন। বাদল ফরাজিকে দেশে ফেরাতে এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মানবাধিকার কমিশনে যোগাযোগ করেছে তার পরিবার।
বাদল জেলে থাকলেও গত এক দশকে কারাগার থেকেই প্রথমে দশম শ্রেণি পাশ করেন, পরে দ্বাদশ। স্নাতকও সম্পন্ন করেছেন বাদল। এখন ইংরেজি ও হিন্দিতে অনর্গল কথা বলতে পারেন বাদল। তিহার কারাগারে এখন তিনি ইংরেজির শিক্ষক। সহবন্দীদের ইংরেজি শেখান। স্নাতকের বাইরেও তিনি আটটি ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন।
Leave a reply