দুর্নীতি ও সন্ত্রাস যারা করবে, জঙ্গিবাদের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার হতেই হবে। দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িতদের কোন জায়গা নেই বাংলাদেশে। মঙ্গলবার রোমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনায় একথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, বিগত বিএনপি জামায়াত-সরকারের আমলে দেশ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিলো।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে রোমের পার্ক দ্যা প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেলে প্রধানমন্ত্রীকে গণ-সংবর্ধনা দেয় ইতালি আওয়ামী লীগ। বক্তব্যের শুরুতেই ইতালি সফর ও ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট- ইফাদে যোগ দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ন পরিবেশ চাই, আমরা দেশের উন্নয়ন চাই। আর এটাই সম্ভব হবে যখন জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও দূর করতে পারবো।
তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতির মামলা দায়ের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আগেই প্রত্যেক মামলার তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিলাম। মামলাগুলোর প্রকৃত অবস্থা আমরা যাচাই করে দেখতে চেয়েছিলাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত হয়েছে এবং এর রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। আমি কোন মামলা প্রত্যাহার করিনি এবং এর অনুমতিও দেইনি, কেন আমি এটা করবো। আমি জানতাম, আমিতো কোন দুর্নীতি করিনি।’
এ সময় তিনি পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, হিলারি ক্লিনটন সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এবং ড. মুহম্মদ ইউনুস সে সময় তাকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দোষ ধরতে মুখিয়ে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ওই সময় তিন তিনবার আমার ছেলেকে এ ব্যাপারে হুমকিও দেয়।
তিনি বলেন, এটি কানাডার আদালতেই প্রমাণ হয়েছে যে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি। ‘আমি বলেছিলাম আমি দুর্নীতি করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই ক্ষমতায় এসেছি। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নয়।
খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত রায় দিয়েছেন। এখানে আমাদের তো করার কিছু নেই। আর আমরা যদি করতামই তা হলে ১০ বছর তো মামলা চলতে দিতাম না। ২০০৮-এ যখন ক্ষমতায় এলাম, তখনই তো করতে পারতাম। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। এখানে আমাকে গালি দেয়া বা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কী যুক্তি থাকতে পারে আমরা তো সেটি বুঝি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালে এই মামলা হয় এবং পরের বছরই এর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এই মামলা ১০ বছর ধরে চলে এবং মামলার শুনানীর জন্য ২৩৬ কার্যদিবস ধার্য হয়। কিন্তুু খালেদা জিয়া আদালতে গেছেন মাত্র ৪০ দিন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার আপত্তির কারণে এই মামলায় তিনবার আদালত পরিবর্তন করা হয় এবং তিনি এর বিরুদ্ধে ২২টি থেকে ২৪টি রিট করেন।
‘তিনবার আদালত পরিবর্তন করে মামলাকে দীর্ঘায়িত করার পরেও যখন আদালত খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিল তখন বিএনপি এই স্বল্প পরিমান টাকার জন্য খালেদা জিয়াকে শান্তি দেয়ার যৌক্তিকতার প্রশ্ন তুলছে,’ -বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, যে টাকা খালেদা জিয়া এবং সংশ্লিষ্টরা অপব্যাবহার করেছেন সে টাকা এতিমদের জন্য এসেছিল। কিন্তুু এতিমদের পরিবর্তে সে টাকা তাদের নিজেদের তহবিলে চলে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা বলেন সেই টাকা তাদের তহবিলে রাখার ফলে দুই কোটি থেকে বেড়ে তিন কোটি হয়েছে। কিন্তুু এতিমরা এ থেকে কি লাভটা পেল।
তিনি বলেন, ‘যদি খালেদা জিয়া বলতেন, সেই টাকা তিনি তার এতিম দুই পুত্রের জন্য রেখেছেন, তারও না হয় একটি যৌক্তিকতা ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, যখন মামলাটি করা হয় (ব্যরিষ্টার) রফিকুল হক সে সময় বলেছিলেন খারেদা জিয়া ঐ পরিমান টাকা জমা করে দিলেই মামলাটি প্রত্যাহার হয়ে যাবে। কিন্তুু তিনি (খালেদা জিয়া) টাকার মায়া ছাড়তে পারেন নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন টাকার যে মূল্য ছিল তা থেকে দুই কোটি টাকা দিয়ে তিনি চারটি ফ্লাট ক্রয় করতে পারতেন, এটিই হচ্ছে বাস্তবতা। কাজেই তিনি টাকার মায়া ত্যাগ করতে পারেন নি বলেই আজকে এতিমের টাকা আত্মস্যাতের কারণে তিনি কারাগারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা বিএনপি দরদি, আঁতেলরা আছে তারা বলে দুই কোটি টাকার জন্য কেন এই মামলা। তাহলে আমার এখানে একটা প্রশ্ন আছে, দুর্নীতির করার জন্য কি একটা সিলিং থাকবে যে এত কোটি পর্যন্ত দুর্নীতি করা জায়েজ। তারা কি সেটা বলতে চায়?’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি তাহলে একটা দাবি করুক যে এত কোটি পর্যন্ত তারা দুর্নীতি করতে পারবে। সেটা নিয়ে একটা রিট করুক।’
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক জিয়া ও কোকো রহমানসহ দলটির নেতাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দেশকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিলো।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ ইতালি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
Leave a reply