পটুয়াখালী প্রতিনিধি::
পটুয়াখালীতে বন্ধুত্ব পাতিয়ে মোটরসাইকেল চুরি করার ঘটনায় চোরচক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় চুরি করা ৪টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতভর পটুয়াখালী শহর ও মহিপুর থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এদেরকে আটক করে।
আটককৃতরা হলো, রাসেল ওরফে দুলু (২৮), হালিম মুন্সি (৩৬), তার স্ত্রী কারিমা বেগম (২২), বাচ্চু মিয়া (২৯), আলামিন শিকদার (৩০) ও আলামিন হোসেন (২৬)। এদের মধ্যে হালিমা, কারিমা, বাচ্চু ও আলামিন শিকদারের বাড়ি পটুয়াখালী শহরের বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া রাসেল ওরফে দুলু ও আলামিন হোসেনের বাড়ি মহিপুরের বিভিন্ন এলাকায়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আখতার মোর্শেদ জানান, আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মুকিত হাসান খান জানান, বরিশালের গৌরনদীর কাশেমাবাদ এলাকার মো. সিদ্দিক মিয়ার ছেলে মো. হুমায়ুন কবিরের সাথে পরিচয়ের পর বন্ধুত্ব হয় বরিশালের বৌদ্ধপাড়া এলাকার মো. রাকিব হাসানের। এরপর রাকিব হুমায়ুনের মোটরসাইকেল নিয়ে পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা বেড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পরে রোববার (৯ মে) সকালে তারা দুইজন মোটরসাইকেল নিয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশে রওনা হয়। এই ফাঁকে রাকিবের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার বন্ধু মোটরসাইকেল চোরচক্রের সদস্য মহিপুরের রাসেল ওরফে দুলুকে পটুয়াখালী শহরের ছোট চৌরাস্তা এলাকায় আরেক সদস্য হালিম মুন্সির বাসায় আনতে বলে।
এদিকে রাকিব আর হুমায়ুন বরিশাল থেকে রওনা হয়ে পটুয়াখালী এসে কৌশলে রাকিব হুমায়ুনের মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে রাসেল ও হালিমের কাছে মোটরসাইকেলটি রেখে আত্মগোপন করে। কোনো উপায় না পেয়ে হুমায়ুন ওই দিন রাতে পটুয়াখালী সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশনা মোতাবেক সাড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ।
মুকিত হাসান খান জানান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ওইদিন থেকে অভিযান শুরু করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের ছোট চৌরাস্তা এলাকায় হালিম মুন্সির বাসায় অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলসহ আরও একটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এরপর হালিম মুন্সিকে আটক করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হালিম মুন্সি জানায়, ৯ তারিখের ওই ঘটনার পর রাতেই হালিম এবং রাসেল মিলে বাচ্চু মিয়ার মাধ্যমে শহরের হেতালিয়া বাধঘাট এলাকার আলামিন শিকদারের কাছে সেই মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দেয়। পরে পুলিশ আলামিন শিকদার, বাচ্চু ও হালিমের স্ত্রী কারিমাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে মঙ্গলবার রাতে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের বন্ধু মহিপুরের রাসেলের বাসা তল্লাশি চালায় মহিপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান। এ সময় রাসেলের বাসা থেকে আরও দু’টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয় এবং চুরির ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে রাসেল ও আলামিন মিয়া নামের আরও দুইজনকে আটক করে পটুয়াখালী সদর থানায় নিয়ে আসা হয় বুধবার ভোরে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, সকালে হুমায়ুনকে খবর দেয়ার পর তিনি এসে কাগজপত্র দেখিয়ে তার মোটরসাইকেলটি শনাক্ত করেন এবং ৯ তারিখে করা তার লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসাবে রুজু করেন।
মুকিত খান জানান, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এই পেশায় জড়িত। এরা শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে দুই মাস তিনমাস পর স্থান পরিবর্তন করে এভাবেই উঠতি বয়সীদের সাথে প্রথমে সম্পর্ক গড়ে তুলে তারপর বন্ধুত্ব। এক পর্যায়ে বন্ধুত্বের ফাঁদে ফেলে তাদের মোটরসাইকেল চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করে আসছে।
সদর থানার ওসি আখতার মোর্শেদ জানান, এদের বিরুদ্ধে আগের কোনো মামলা আছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Leave a reply