দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও এভারেস্ট জয়ের অনন্য কীর্তি গড়লেন চীনের নাগরিক ঝ্যাঙ হং। ২৪ মে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পা রাখেন তিনি। চূড়া থেকে নেমেও এসেছেন নিরাপদে। ছয়জনের চীনা অভিযাত্রীর দলটির বাকিরা ব্যর্থ হলেও অদম্য মনোবল নিয়ে ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার উচ্চতায় ওঠেন ঝ্যাং।
এর আগে আরও দু’জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এভারেস্ট জয় করেন। তবে এশিয়ার কেউ এ কীর্তি গড়লেন প্রথমবারের মতো। যাত্রা শুরু করেছিলেন ছয় জন। তবে হিমালয়ের প্রতিকূল আবহাওয়া, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছেছেন কেবল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ঝ্যাং হং।
৪৬ বছর বয়সী এ অভিযাত্রীর জন্ম চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর চংকিংয়ে। গ্লুকোমাজনিত জটিলতায় ২৫ বছর আগেই হারান দৃষ্টিশক্তি। তবে পর্বতারোহরণের অদম্য সাহস আর মনোবলের সামনে বাধা হতে পারেনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।
এ বিষয়ে ঝ্যাঙ হং বলেন, যখন সবচেয়ে উপরে উঠলাম বাতাসের আওয়াজ রীতিমত ভয়ঙ্কর ছিল। চূড়ায় পৌঁছে অবশ্য অন্যদের মতো আবেগপ্রবণ হয়ে পড়িনি। বরং মনে হচ্ছিলো সেখানকার পরিবেশ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। গাইডকে বলেছি দ্রুত নিচে নামতে চাই। কারণ আমি জানতাম, চূড়ায় পৌঁছে অভিযাত্রার কেবল অর্ধেক পূরণ হয়েছে।
তিন বছর ধরেই পর্বতারোহণের কঠিন অনুশীলন করেছেন ঝ্যাং। দু’বছর আগে, জয় করেন চীনের জিনজিয়াংয়ের মুজতাগ আটা পর্বত। হিমালয় অভিযানে ঝ্যাংয়ের সাথে ছিলেন তিনজন গাইড। ২৭ মে তারা ফিরে আসেন বেস ক্যাম্পে।
ঝ্যাঙ হং আরও জানান, কোথায় আছি বুঝতে না পারায় অনেকবার পড়ে গেছি। তবে মনোবল ছিল। কঠিন হলেও বাঁধাগুলো পার হতে হবে। বিপদতো থাকবেই। পর্বতারোহণের অংশই এগুলো।
২০১৭ সালে নেপাল সরকার প্রতিবন্ধীদের পর্বতারোহণে নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা করেছিল। পরে আদালতের নির্দেশে বাতিল হয় তা। ঝ্যাংয়ের আগে মাত্র দু’জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জয় করেন এভারেস্ট। ২০০১ সালে এভারেস্ট বিজয়ী মার্কিন পর্বতারোহী এরিক ওয়েইহেমেয়ারকে নিজের অনুপ্রেরণা বলে মনে করেন ঝ্যাং। ২০১৭ সালে অস্ট্রিয়ার নাগরিক অ্যান্ডি হোজলারও ওঠেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের চূড়ায়।
ঝ্যাঙ হং জানান, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যে আপনি শারীরিক প্রতিবন্ধী নাকি স্বাভাবিক, দৃষ্টিশক্তি, হাত-পা না থাকাটা বড় সমস্যা নয়। মনোবল থাকলে বাকি সবাই যে কাজ পারে, আপনিও পারবেন।
মহামারির কারণে মাঝে এক বছর বন্ধ থাকার পর গত মাসে বিদেশিদের জন্য হিমালয়ের দরজা খুলে দেয় নেপাল সরকার। অনেকেই এ সুযোগ নিয়ে এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। সবচেয়ে বেশি বয়সে আমেরিকান হিসেবে, চূড়ায় উঠেছেন, ৭৫ বছর বয়সী আর্থার মুইর।
এনএনআর/
Leave a reply