Site icon Jamuna Television

শহীদদের স্মরণে ১ লাখ মোমবাতি প্রজ্জ্বলন!

এ এক চোখ ধাঁধানো আয়োজন। একটি-দুটি নয়, এক লাখ মোমবাতি জ্বেলে নড়াইলবাসী স্মরণ করবে একুশের অমর ভাষা শহীদদের। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের কুড়িরডোব মাঠ প্রাঙ্গনে ‘অন্ধকার থেকে মুক্ত করুক একুশের আলো’ এই শ্লোগান নিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও এই আয়োজন করেছে একুশ উদযাপন পর্ষদ। এ সময় মঞ্চে ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ এই গান দিয়ে শুরু হবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পরিবেশনা গণসঙ্গীত ও কবিতা। নড়াইলবাসীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার দর্শনার্থী উপভোগ করবেন এই মনোহর দৃশ্য।

একুশ ফেব্রুয়ারি এলেই নড়াইলবাসী অপেক্ষা করেন সন্ধ্যার মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের দৃশ্য দেখার জন্য। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ভিক্টোরিয়া কলেজের কুরিডোব মাঠ প্রাঙ্গনে আলোকিত হয়ে ওঠবে। একে একে জ্বলে উঠবে লাখ মোমবাতি । ধীরে ধীরে আকার স্পষ্ট করে দেয় নানা বর্ণমালার, শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতি সৌধ, জাতীয় সংসদ ভবন, শাপলা ফুল আর বিভিন্ন আল্পনার। এর মধ্যেই মাঠের পাশে তৈরী করা মঞ্চে শুরু হয় ভাষার গান আর কবিতা আবৃত্তির। প্রায় দুই ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানের খবর আর এই জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে অনেকদুর।

আজ একুশ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রজ্জ্বলন শুরু হবে মোমবাতি। অন্ধকার ছাপিয়ে বাহারি ডিজাইনের আলোয় আলোকিত হয়ে যায় বিশাল এই মাঠ।

আয়োজকরা আশা করছেন, দেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি আর সংগীতশিল্পীদের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য হবে অনুষ্ঠানটি। প্রতিবছরই আয়োজনে শ্লোগান থাকে ‘অন্ধকার থেকে মুক্ত করবে একুশের আলো’।

একুশে উদযাপন পর্ষদের আহবায়ক প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমান ও সদস্য সচিব কচি খন্দকার জানান, আমাদের জ্ঞানের যে অন্ধকার, সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প, সমাজের কুপমুন্ডকতা – সামগ্রিক এসব অন্ধকারের বিরুদ্ধে একুশের আলো। এ আলো শুধু মাঠের আলো নয়। সামগ্রিক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রত্যয় জাগানিয়া আলো। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য সচিব শরফুল আলম লিটু জানান, এবারই প্রথম মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের পাশাপাশি বিকাল ৩টায় নড়াইলের সকল লেখকদের বই নিয়ে “বইমেলা”র আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জলন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের পত্নী বেগম ফজিলাতুন্নেছা

নেপথ্যের কথা

ভাষা শহীদদের স্মরণে নড়াইলে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ভাবলেন বাঙ্গালির সবচেয়ে বড় অহংকারের দিন ২১ ফেব্রুয়ারিকে একটু অন্যভাবে পালন করা যায় কী করে। ভাবলেন মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণের কথা। কিন্তু মোমবাতি জ্বালিয়ে তো স্মরণ তো অনেক শহীদ মিনারে হয়ে থাকে। তাহলে? মোমবাতির সংখ্যা বাড়িয়ে নিলেই তো হলো! যে ভাবা সেই কাজ। বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ স্মৃতি সংসদের ব্যানারে সাংস্কৃতিক কর্মী আব্দুর রশীদ মন্নু, শরফুল আলম লিটু, শামীমুল ইসলাম টুলু, সৈয়দ ওসমান, লিজা, শান্ত, সংগঠক ওমর ফারুক, মলয় কুন্ডসহ আরো অনেকে শামিল হলেন এ উদ্যোগে। অধ্যাপক মুন্সী হাফিজুর রহমান, নাট্য নির্মাতা কচি খন্দকার যুক্ত হলেন তাদের সাথে।সিদ্ধান্ত নিলেন এই আয়োজনে হবে ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠে। এই মাঠটির অবস্থানও চমৎকার। মাঠের তিনপাশে রয়েছে উচু রাস্তা। যেখান থেকে নিচে দেখা যায় আলোর প্রজ্জ্বলন। রাস্তাতে প্রচুর মানুষ দাড়িয়ে সেই দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ আছে। মানুষ আসলেন দেখলেন বিমোহিত হলেন। উৎসাহ পেলেন আয়োজকরা। প্রথমবার শুরু হয়েছিল ২০ হাজার মোমবাতি দিয়ে। কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবী নানা আল্পনায় সাজিয়েছিলেন মাঠটিকে। সন্ধ্যার পর মোমবাতির আলো জ্বালিয়ে উদ্বোধন করলেন বাংলার সূর্যসন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা। মোমবাতি কিনে বেশি দামে বিক্রি করে অর্থ যোগাড় করেছিলেন তারা।

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল প্রতিনিধি।
যমুনা অনলাইন: আরটি/টিএফ

Exit mobile version