কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি মাত্র ৪১ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন। ভাষা ও ছন্দের ওপর ছিল তার অসাধারণ দখল। তাই শব্দ ও ছন্দ নিয়ে যেমন খেলা করেছেন, সেই সঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞান, ঐতিহ্য, প্রকৃতি, স্বদেশ-সমাজ-সমকাল সম্পর্কেও ছিলেন সমাসক্ত। নিজগুণে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ‘ছন্দের জাদুকর’ অভিধা।
১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার কাছে নিমতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। তার পিতামহ অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক, বিজ্ঞান-অনুরাগী ও ইতিহাস-প্রেমিক। কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রাস (১৮৯৯), জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন সত্যেন্দ্রনাথ। বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন তিনি। পরে সব ছেড়ে কাব্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন।
রবীন্দ্রভক্ত হয়েও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্বাতন্ত্র্য রয়েছে তার কাব্য-বিষয়বস্তুতে, ছন্দ-নির্মিতিতে এবং শব্দ ও ভাষা প্রয়োগের কারুকার্যে। দেশাত্মবোধ ও মানবতার বন্দনা তার রচনার মূল বিষয়। সংস্কারমুক্ত উদার মানবতাবাদী কবি মানুষে মানুষে মহামিলনের স্বপ্ন দেখেছেন। বলেছেন- ‘জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে/সে জাতির নাম মানুষ জাতি’। শিশু-কিশোরদের জন্য তার হৃদয়ে ছিল গভীর আবেগ। শিশুর ‘প্রথম হাসির ধ্বনি’ কবির কাছে মনে হয়- ‘ফুলঝুরিতে ফুলকি হাসির রাশি’। ‘ছিন্নমুকুল’ কবিতায় ‘ছোট্ট যে জন’ তার অভাব কীভাবে ‘সকল শূন্য করে’, দেয় তার হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা আছে। সমাজের আচার সর্বস্বতা, শুষ্কনীতি, শ্রেণি-দ্বন্দ্ব, নারী-পুরুষ বৈষম্য- এসবের বিরুদ্ধেও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন সদা সত্যভাষী।
নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখতেন। সবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোমশিখা, কুহু ও কেকা, অভ্র-আবির, বেলা শেষের গান প্রভৃতি তার রচিত কাব্যগ্রন্থ।
এনএনআর/
Leave a reply