বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়ে আমতলীর সচেতন মানুষ।
নির্বাচনের পরের দিন মঙ্গলবার (২২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ওই বৃদ্ধের ঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুটসহ তার এক ছেলের স্ত্রী ও এক ভাইয়ের স্ত্রীকেও মারধর করা হয়।
এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কুদ্দুস হাওলাদার (৬৫)। তিনি আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের পাতাকাটা এলাকার বাসিন্দা।
কুদ্দুস হাওলাদার বলেন, গত ২১ জুন সোমবার আমাদের ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদারকে সমর্থন করি। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন। আর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামান খান বাদল।
তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করার পরের দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আক্তারুজ্জামান খান বাদলের কর্মী ও সমর্থক আমার প্রতিবেশী কাইউম হাওলাদারের ছেলে রাশেদুল, আমজাদ হাওলাদারের ছেলে মনিরুল, সোহেলের ছেলে মিরাজ এবং নাসিরের ছেলে ইলিয়াসসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন লোক আমাকে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বাহিরে নিয়ে যায়।
এরপর তারা আমার ভাইয়ের বউ ও পুত্রবধূসহ নাতি-নাতনিদের সামনে আমাকে মারধর করে কান ধরিয়ে ওঠবস করায়। এতে আমার ছেলে বউ এবং ভাইয়ের বউ বাধা দিলে তাদেরকেও মারধর করে তারা। এসময় তার ঘরের শোকেস ও আলমিরা ভেঙে ১৮ হাজার টাকাসহ নাতনির বিয়ের জন্য রাখা লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণালংকারও নিয়ে যায়।
কুদ্দুস হাওলাদার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ৬৫ বছর বয়স। গরীব হলেও তো আমার সম্মান আছে। এই বয়সে ভাইর বউ ও ছেলে বউসহ নাতি-নাতনিদের সামনে আমাকে মারধর করে কান ধরে ওঠবস করালো ওরা। আমার এখন লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে। কার কাছে বিচার দিব? কে বিচার করবে এ ঘটনার? কিছুই বুঝতে পারছিনা। এমন ঘটনার আগে আমার মরণ হওয়াই ভাল ছিল।
এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মহসিন হাওলাদার বলেন, নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী অংশগ্রহণ করবে এবং জয়-পরাজয় থাকবে। তাই বলে পরাজিত প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের এভাবে লাঞ্ছিত করবে, মারধর করবে, বাড়িঘর ভাঙচুর করবে, এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। বৃদ্ধ কুদ্দুস হাওলাদারের সঙ্গে যা ঘটেছে তা নিঃসন্দেহে চরম লজ্জাজনক এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
তিনি বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আখতারুজ্জামান খান বাদল নিজের কর্মী ও সমর্থকদের দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা এবং ভাঙচুর শুরু করেছেন। এ বিষয়ে আমি আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলেও তারা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এ বিষয়ে চাওড়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান বাদল বলেন, আমার ও আমার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া ও ভিত্তিহীন। আমার কর্মীরা কোন অন্যায় ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নয়। নির্বাচনে হেরে গিয়ে অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদার আমার কর্মী ও সমর্থকদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।
কুদ্দুস হাওলাদারের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে এ বিষয়ে আমতলী থানার ডিউটি অফিসার উপ পরিদর্শক (এসআই) আবদুল মান্নান বলেন, বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে ওঠবস করার ঘটনা এবং এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই।
তিনি বলেন, চাওড়া ইউনিয়নের পরিস্থিতি শান্ত আছে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আছে। এরপরও যদি কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a reply