গেল বছর যমুনা নদীর ভাঙনে সারিয়াকান্দী থানার প্রায় চারটি ইউনিয়ন বিলিন হয়ে যায়। সাথে সাথে বিশটিরও বেশি সরাসরি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলে যায় নদীগর্ভে। নদীভাঙ্গা মানুষের মতো সেই স্কুলগুলো আশ্রয় নিয়েছে বাঁধে। কোনটির ঘর আছে বেঞ্চ নেই, একটি ঘরেই চলছে পাঁচ শ্রেণীর পাঠদান। সমস্যা হলো শিক্ষার্থীর বড্ড অভাব।
শিক্ষকদের মতে, নদী ভাঙনে যে যেদিকে পেরেছে, আশ্রয় নিয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে পড়েছে একেক জায়গায়, আর এতেই শিক্ষার্থীশূণ্য হয়ে পড়ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। সরাসরি নিয়মে বিদ্যালয়ের জন্য নতুন করে জায়গা বরাদ্দ হবে না। তাই স্কুলের সভাপতি, কমিটি ও শিক্ষকরা মিলে নিজেদের উদ্যোগেই করছেন স্কুলঘরের ব্যবস্থা।
শিক্ষার্থী সংকট এতই প্রকট যে কিছু কিছু স্কুলে তিনজন শিক্ষার্থীর জন্য তিনজন শিক্ষককে উপস্থিত দেখা যায়। একই ঘরে তিন শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে একসাথে ক্লাস নিচ্ছেন তিনজন শিক্ষিকা। এমন চিত্র সারিয়াকান্দীর যমুনা বাঁধের প্রায় প্রতিটি স্কুলেই। শিক্ষার্থী না থাকলেও শিক্ষকের অভাব নেই। প্রতিটি স্কুলেই পদ রয়েছে গড়ে পাঁচটি। শিক্ষার্থী না থাকায় পাঠদানেও গা করেন না শিক্ষকরা। স্কুল চলে খেয়াল খুশিমতো। এসব স্কুলে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি হার পঞ্চাশ শতাংশ। নানা অজুহাতে স্কুল ফাঁকি দিলেও উপস্থিতি খাতায় ঠিকই শতভাগ উল্লেখ আছে।
বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষের কাছে এ আরেক বিড়ম্বনা। একে তো ভিটেবাড়ি হারিয়ে কাটছে অনিশ্চিত জীবন, অন্যদিকে সন্তানের লেখাপড়াও হচ্ছে না। অভিভাবকদের অভিযোগ সকাল ৯টায় স্কুল খোলার নিয়ম থাকলেও শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসেন ১১টায়। নিয়মিত ক্লাসের কোন হিসাব নেই। বাচ্চাদের স্কুলের বাইরে খেলতে দিয়ে শিক্ষকরা ব্যস্ত থাকেন আড্ডা, ফেসবুক কিংবা রোদ পোহাতে। স্কুলের দফতরিকে দিয়ে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
বগুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ হোসেন আলী জানান, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একিভূত করতে গেলে সরাসরি নথিভুক্ত স্কুলের নাম বিলুপ্ত হয়ে যায়। সরাসরিভাবে কোন স্কুলের নাম এবোলিশ করার সুযোগ নেই। এমন সব জটিলতার কারণে পরিস্থিতি থেকে সহসা উত্তরণের কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। চরাঞ্চলের নদীভাঙন কবলিত মানুষের সুশিক্ষা নিশ্চিত করাও যেন সুদুর পরাহত।
Leave a reply