চাঞ্চল্যকর হলি আর্টিজান হামলার পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। রাজধানীর গুলশানের ওই বেকারিতে পাঁচ বছর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গি হামলায় নব্য জেএমবির পাঁচ জঙ্গি মিলে ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি তিন নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যা করে। যার মধ্যে দুইজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। ভয়ানক সেই রাত শেষে ভোরে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এ নিহত হয় ওই জঙ্গিরা। বেকারি থেকে উদ্ধার করা হয় আটকে পড়া ৩৫ জনকে।
এক বছরের বিচার কাজ শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৭ জনকে ফাঁসি ও একজনকে খালাস দিয়ে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। এসময় পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ক্ষুণ্ণ করা, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বিনষ্ট করা ও বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব জানান দিতেই এই হামলা চালানো হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সবারই একই অপরাধপ্রবনতা ছিলো; তাই অনুকম্পা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সের উপর শুনানির অপেক্ষায় আছে।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, গাইবান্ধার জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, নওগাঁর আসলাম হোসেন ওরফে আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ, কুষ্টিয়ার আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, জয়পুরহাটের হাদীসুর রহমান ওরফে সাগর, বগুড়ার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও রাজশাহীর শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ। খালাস দেওয়া হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে।
ওই রাতে গুলশান এলাকায় কলসাইন কিলো পার্টির দায়িত্বে ছিলেন উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন। টিম নিয়ে সর্বপ্রথম ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি। গাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরই তার ওপর গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। এরপর টানা ২০ মিনিট জঙ্গিদের সাথে গোলাগুলি করে তাদের বেকারীর ভেতর আটকে রাখেন তিনি।
ডিএমপির উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন বলেন, গাড়ি নিয়ে সামনে যাওয়ার পরই ওরা আমার ওপর গ্রেনেড ছুঁড়ে। আমি নিজেকে আড়াল করে ওদের উপর গুলি চালানো শুরু করি। ভেতরে লোকজনের কান্না আর আহাজারি শোনা যাচ্ছিল।
তৎকালীন গুলশান থানার পরিদর্শক তদন্ত ছিলেন সালাহউদ্দিন মিয়া। চোখের সামনে মারা যেতে দেখেন দুই কর্মকর্তাকে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর টানা পুরো অভিযানে অংশ নিয়েছেন। টানা তিনদিন নির্ঘুম থেকে তাৎক্ষনিক তদন্তের কাজ করেছেন তিনি।
তৎকালীন গুলশান থানার পরিদর্শক সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, ঘটনার আকস্মিকতায় আমাদের কমিশনার স্যারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনা বোঝার জন্য একটু সামনে এগুতেই আমাদের উপর গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। রবিউল স্যার মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সালাউদ্দিন স্যার একটু দূরে একইভাবে লুটিয়ে যান। শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছিল। সারা শরীরে স্প্লিনটার। এমন বীভৎস রাত চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই।
জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডের স্প্লিনটার শরীরে নিয়ে বেঁচে আছেন তৎকালীন গুলশান বিভাগের এডিসি আব্দুল আহাদ। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এলেও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় বিভীষিকাময় স্মৃতি।
তৎকালীন গুলশান বিভাগের এডিসি ও বর্তমান ডিসি মতিঝিল বিভাগ আব্দুল আহাদ বলেন, গ্রেনেড ছোঁড়ার পর আমি আর কিছুই বলতে পারি না। আমার শরীরে এখনো স্প্লিনটার আছে। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছি। সেই রাত একটা বিভীষিকাময় রাত।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সেই সময়ের মতো জঙ্গিদের সক্ষমতা এখন আর নেই।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, প্রায় ৪০০’র মতো জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। ৬৩ জন জঙ্গি আমাদের অপারেশনে নিহত হয়েছে। এখন তাদের তৎপরতা শুধুই অনলাইন নির্ভর। আমাদের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
Leave a reply