দৃষ্টিহীন সন্তানের জন্য অত্যাধুনিক চশমা বানালেন স্প্যানিশ দম্পতি

|

হাঁটতে শেখার পর থেকেই ঘন ঘন হোঁচট খেতো দুই বছরের বিয়েল; পারত না সিঁড়ি বেঁয়ে উঠতেও। চোখের চিকিত্সকের শরণাপন্ন হয়ে বিয়েলের বাবা-মা জানলেন, চক্ষু চিকিৎসার প্রচলিত কোনো উপায়ে সমাধান নেই এই সমস্যার। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়া মা–বাবা শেষে লেগে পড়লেন সন্তানকে সাহায্য করতে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।

২ বছর বয়স থেকে চোখের এক দুরারোগ্য রোগে ভুগছিল বিয়েল। স্পেনের অভিজ্ঞ সব চক্ষু
বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে জানা গেল, বিয়েলের দৃষ্টিশক্তি অনেক কম। সে যে রোগে ভুগছে তা আর দশটি সাধারণ চোখের রোগের মত নয়।

বিয়েলের বাবা-মাকে ভীষণ হতাশ করে চিকিৎসকরা জানালেন, চশমা ব্যবহার বা অস্ত্রোপচারে এই সমস্যার কোনো সমাধান নেই। তারা বলেছিলেন, বিয়েলের দৃষ্টিশক্তি কমার পেছনে চোখের স্নায়ু, রেটিনা, মস্তিষ্ক বা অন্য কোনো সমস্যার জন্যও এমনটা হয়ে থাকতে পারে। গ্লুকোমা বা পেশিক্ষয়ের মত বিষয়গুলোকেও দায়ী করেছিলেন কোনো কোনো ডাক্তার।

শেষে কোনো উপায় না পেয়ে বিয়েলের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বাবা জাউমে পুজ ও মা
ড. কনস্টানজা লুসেরো নিজেরাই নামেন ছেলের দৃষ্টিশক্তি ফেরানোর অসম্ভব লড়াইয়ে। ৬ বছর কঠোর পরিশ্রম করে অবশেষে অসম্ভব এই লড়াইয়ে জিতলেন এ দম্পতি। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রকৌশলীর সহায়তায় জাউমে ও কন্সটানজা মিলে গেমিং গগলস ও সাধারণ চশমার সমন্বয়ে তৈরি করেছেন উচ্চ প্রযুক্তির বিশেষ এক চশমা। ছেলের নাম অনুসারে তারা এই চশমার নাম রেখেছেন বিয়েল গ্লাস।

জাউমে পুজ বলেন, প্রথমে ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত থাকায় আমরা খুব বেশি কিছু ভাবতে না পারলেও যখন কাজ করতে শুরু করলাম তখন আমরা উপলব্ধি করি কম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্নদের সাহায্য করার জন্য সাদা ছড়ি আর গাইড কুকুর ছাড়া আর অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। আশা করব আমাদের এই প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী কম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন সকল মানুষের জন্য সহায়ক হবে। পুত্র বিয়েলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সন্তানকে হয়তো সুস্থ করতে পারব না, কিন্তু কিছুটা সাহায্য করতে পারব।

অত্যাধুনিক এই চশমার একটি ডিসপ্লে রাখা হয়েছে। সেখানে চশমার সামনে থাকা লেখা, ছবি ও ভিডিও এবং চলার পথে যেকোনো বাঁধাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে যার সাহায্যে নির্বিঘ্নে পথ চলতে পারবেন যেকোনো কম দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি। চশমাটি পরে চলার পথে কোনো বাধা এলে ডিসপ্লেতে লাল একটি বৃত্ত দেখা যায়। এর ফলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যাবে। চশমাটিতে রাস্তার বিভিন্ন সংকেত ও দূরবর্তী যেকোনো কিছু জুম করে দেখার সুবিধাও আছে।

চশমাটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৯ লাখ ইউরো যার ৬৫ হাজার ইউরো দিয়েছেন জাউমা ও কনস্টানজা দম্পতি। বাকিটা এসেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও তহবিল থেকে। এই বিশেষ চশমা তৈরিতে সহায়তা দিয়েছেন আরও অনেকেই। ২০২১ এর শেষের দিকে চশমাটি স্পেন ও ডেনমার্কের বাজারে বাণিজ্যিকভাবে আসতে পারে বলে জানা গেছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply