টাইব্রেকে মার্টিনেজ ম্যাজিক; ফাইনালে আর্জেন্টিনা

|

ফাইনালে আর্জেন্টিনা

মার্টিনেজ ম্যাজিকে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে হাইভোল্টেজ ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকে ১(৩)-১(২) গোলের জয় পেয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের শুরুতেই আলবিসেলেস্তেরা এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফেরে কলম্বিয়া। এরপর লিড নেয়ার একাধিক সুযোগ মিস করেন মেসি-মার্টিনেজরা। অতিরিক্ত সময়ের নিয়ম না থাকায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকে আর সেখানেই আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়ানো। কলম্বিয়ার নেয়া ৪টি শটের ৩টিই প্রতিহত করেন তিনি। আর তাতেই কোপার ফাইনালে আর্জেন্টিনা যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে পাচ্ছে তারা।

ম্যাচের শুরুতেই ৭ মিনিটের মাথায় মেসির পাস থেকে করা মার্টিনেজের গোলে ১-০ তে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এই পাসের মাধ্যমে নজির স্থাপন করলেন মেসি। মেসির আগে কোপায় কেউ ৪টির বেশি গোলের পাস বাড়াতে পারেননি।

৯ মিনিটের মাথায় কুয়াদ্রাদোর শট বাঁচিয়ে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনার সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডার জিওভানি লো সেলসো ২১ মিনিটের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন।

ম্যাচের ২২ মিনিটের মাথায় কুয়াদ্রাদো ফ্রি কিকে আর্জেন্টিনার বক্সে বল রাখার চেষ্টা করেন। তবে গঞ্জালেজ বল ক্লিয়ার করেন।

জিওভানি লো সেলসো হ্যান্ড বল করায় ২৬ মিনিটের মাথায় ফ্রি কিকের নির্দেশ দেন রেফারি। সুবিধাজনক জায়গা থেকে ফ্রি কিকের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি কলম্বিয়া। ৩৬ মিনিটের পোস্টে প্রতিহত হয় মাথায় বারিয়সের শট।

৩৮ মিনিটের মাথায় কুয়াদ্রাদোর কর্নার থেকে হেডে গোল করার চেষ্টা করেন মিনা। কিন্তু, তার হেডার ক্রসবার ছুঁয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়।

৪৪ মিনিটে মেসির কর্নার থেকে গঞ্জালেজ হেডে গোল করার চেষ্টা করেন। তবে গোলকিপার দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠায় ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত ৪ মিনিটের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন কুয়াদ্রাদো।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বোরে, তেসিলো ও কুয়েলারকে উঠিয়ে কারদোনা, ফাব্রা ও চারাকে মাঠে নামায় কলম্বিয়া। মলিনার বদলে মন্তিয়েলকে মাঠে নামায় আর্জেন্টিনা।

৪৮ মিনিটে মার্টিনেজ ডায়াজের শট প্রতিহত করেন। কলম্বিয়ার ফাব্রা হলুদ কার্ড দেখেন ৫৫ মিনিটের মাথায়।

৫৬ মিনিটে লো সেলসোকে তুলে নিয়ে পারেদেসকে মাঠে নামায় আর্জেন্টিনা। ৫৭ মিনিটের মাথায় মাঠের বাইরে চলে যায় মেসির ফ্রি কিক।

জাপাতাকে উঠিয়ে মিগুয়েলকে মাঠে নামায় কলম্বিয়া ৬০ মিনিটে। আর ৬১ মিনিটেই কলম্বিয়ার পক্ষে আসে ম্যাচে সমতায় ফেরার গোল। কারদোনার পাস থেকে গোলটি করেন ডায়াজ। ৬৩ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখে ফেলেন মিগুয়েল।

গঞ্জালেজকে উঠিয়ে ৬৭ মিনিটের মাথায় ডি মারিয়াকে মাঠে নামায় আর্জেন্টিনা। ৬৮ মিনিটে কুয়াদ্রাদোর ফ্রি কিক থেকে আর্জেন্টিনার জালে বল জড়ানোর চেষ্টা করেন স্যাঞ্চেজ। কিন্তু, গোলরক্ষক অনায়াসেই তা সেভ করে ফেলেন।

৭২ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার মন্তিয়েল আর ৭৫ মিনিটের মাথায় কলম্বিয়ার মুনোজ হলুদ কার্ড দেখেন।

৮২ মিনিটে ডি মারিয়ার পাস থেকে নেয়া বলে শট নেন মেসি। কিন্তু, পোস্টে লেগে বল প্রতিহত হয়।

৮৬ মিনিটের কারদোনা ও ৮৭ মিনিটের মাথায় রডরিগেজ হলুদ কার্ড দেখে।

ম্যাচের ৮৮ মিনিটে কলম্বিয়ার বারিয়স ও অতিরিক্ত এক মিনিটে আর্জেন্টিনার পেজেল্লা হলুদ কার্ড দেখেন।

নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ফলাফল অমীমাংসিত থেকে যায়। কোপার আয়োজক সংস্থা কনমেবল নকআউট পর্বে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলা বাতিল করায় ম্যাচ সরাসরি গড়ায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারে কলম্বিয়ার পক্ষে কুয়াদ্রাদো প্রথম শট নেন। ঠেকাতে পারেননি মার্টিনেজ। ফলাফল গোল। কলম্বিয়া ১, আর্জেন্টিনা ০।

আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শট নেন মেসি। দুর্দান্ত ছিল শট। এটাও গোল হয়ে যায় চোখের পলকেই। কলম্বিয়া ১, আর্জেন্টিনা ১।

ডেভিনসন সানচেজ কলম্বিয়ার পক্ষে দ্বিতীয় শট নিতে আসেন। বাম পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে সানজের শট ফিরিয়ে দেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক মার্টিনেজ। ফলে গোল হলো না। ফলাফল রয়ে গেল সেই কলম্বিয়া ১, আর্জেন্টিনা ১।

এরপর, আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় শট নিতে আসেন রদ্রিগো ডি পল। গোলবারের ওপর দিয়ে চলে যায় তার শট। ফলাফল অপরিবর্তিতই রয়ে গেল।

কলম্বিয়ার পক্ষে তৃতীয় শট নেন ইয়েরি মিনা। আবারও ঝাঁপিয়ে পড়ে মিনার শট ফিরিয়ে দেন মার্টিনেজ। আবারও হলো না গোল।

আর্জেন্টিনার পক্ষে লিয়ান্দ্রো পেরেডেস তৃতীয় শট নেন। ডেভিড ওসপিনা ঝাঁপিয়ে পড়েও ফেরাতে পারলেন না। গোল বাড়ল আর্জেন্টিনার। কলম্বিয়া ১, আর্জেন্টিনা ২।

কলম্বিয়ার চতুর্থ শট নিতে আসেন মিগুয়েল বোরজা। কিন্তু, মার্টিনেজ এটি ঠেকাতে পারলেন না। ফলে, কলম্বিয়ার বাড়ল আরও একটি গোল। কলম্বিয়া ২, আর্জেন্টিনা ২।

আর্জেন্টিনার চতুর্থ শট নেন লওতারো মার্টিনেজ। গোল হয়ে গেল এটিও। ওসপিনা ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি। কলম্বিয়া ২, আর্জেন্টিনা ৩।

কলম্বিয়ার শেষ শট নিতে আসেন এডউইন করডোনা। তার শটটিও ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন মার্টিনেজ। শট ঠেকানোর সাথে সাথেই জেতার আনন্দে দৌড় দেন মার্টিনেজ। দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন তার সতীর্থরা।

কোপা আমেরিকার ফাইনালে ওঠার আনন্দের উদযাপন হতে থাকে মার্টিনেজকে ঘিরে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply