কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার সুস্থতা কামনার প্রার্থনায় নিমগ্ন ছিলেন দেশের লাখ লাখ ভক্ত পাঠক। কিন্তু আটকে রাখা যায়নি তাকে। তিনি পাড়ি জমান অন্য ভুবনে।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তার শঙ্খনীল কারাগার, এইসব দিনরাত্রি, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, কবি, জোছনা ও জননীর গল্পসহ প্রায় দুইশোর অধিক পাঠক নন্দিত উপন্যাস লিখেছেন তিনি। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। জনপ্রিয়তার জগতে হুমায়ুন আহমেদ একক ও অনন্য।
নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও হুমায়ুন আহমেদের দক্ষতা ও খ্যাতি অসমান্তরাল। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদসংকেত, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি।
হুমায়ূন আহমেদের শরীরে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তিনি তাকে নিতে হয় লাইফ সাপোর্টে। ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। ২৪ জুন তাকে দাফন করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়। হুমায়ূন আহমেদকে শেষ বিদায় জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে নেমেছিল মানুষের এক অভূতপূর্ব ঢল।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ হুমায়ুন আহমেদ ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
Leave a reply