পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
সমুদ্রে মৎস্য সম্পদের মজুদ বাড়ানোর লক্ষ্যে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপকূলের জেলেরা। দেশীয় জলসীমায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছের প্রজননের লক্ষ্যে সরকার এ অবরোধ জারি করেছিল। তবে ভরা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখন তারা সাগরে মাছ পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ব্যবসায়ী ও জেলেরা। যদিও অনেকে আশা করছেন, এবারও ইলিশসহ অন্যান্য মাছ বেশি পাওয়া যাবে।
পটুয়াখালী মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো এবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে এই নিষেধাজ্ঞা চালু হলেও ২০১৯ সাল পর্যন্ত শুধু ফিশিং বোট এ ঘোষণার আওতায় ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে ২৫ হাজার ট্রলার ও নৌকাকেও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।
মূলত হারিয়ে যাওয়া মাছের কিছু প্রজাতির বংশবৃদ্ধির পাশাপাশি সামুদ্রিক ৪৭৫ প্রজাতির মাছের অবাধ প্রজননের জন্যই সাগরে এই অবরোধ দেয়া হয়। ২৩ জুলাই রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে এই নিষেধাজ্ঞা। মাঝরাত থেকেই সাগরে রওয়ানা দেবে জেলেদের নৌকাগুলো। তাই শেষ সময়ে জাল সেলাই আর নৌকা মেরামত করে তেল, বরফসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপকূলের জেলেরা।
আজ রাত ১২টার পরই জেলেরা পুরোদমে নদী ও সাগরে ট্রলার ভাসাবেন। এ নিয়ে মৌসুমে ঋণগ্রস্ত জেলে পরিবারগুলোতেও দেখা গেছে প্রাণচাঞ্চল্য।
মহীপুর ও আলীপুর মৎস্য বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে শ্রমিকরা আড়ৎগুলো পানি দিয়ে পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত। এছাড়াও কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের জেলে-অধ্যুষিত গঙ্গামতি গ্রামে গিয়েও দেখা যায় জেলেরা বাড়ির উঠান ও রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় জাল মেরামত ও গোছগাছ করছেন।
জীবিকার তাগিদে মাছ আহরণে সাগরে যাবার প্রস্তুতি নিলেও স্বস্তি নেই জেলেদের মনে। ইলিশের ভরা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখন সমুদ্রে আদৌ মাছ পাওয়া যাবে কিনা সে চিন্তাই জেলেদের ভাবিয়ে তুলেছে। দীর্ঘ কয়েক যুগ সাগরে মাছ ধরেছেন জেলে মুছা হাওলাদার। তিনি বলেন, ভরা মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখার পর এখন মাছ পাওয়া নিয়ে তারা সন্দিহান। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময় তারা মাছ ধরতে না পারলেও পাশের দেশের জেলেরা বাংলাদেশের এলাকায় এসে মাছ ধরেছে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ ছিল না বলেও অভিযোগ তার।
তবে বাগেরহাটের মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম তানভীরুল হক জানান, নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের সাময়িক ক্ষতি হলেও দেশে মৎস্য সম্পদ আরও সমৃদ্ধ হবে যার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়বে।
উল্লেখ্য, পটুয়াখালী জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৯ হাজার ৬শ ৬০ জন। এর মধ্যে সমুদ্রগামী নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৮০৫ জন। এছাড়াও এই এলাকায় আরও প্রায় ২০ হাজার অনিবন্ধিত জেলে রয়েছেন।
Leave a reply