১৯৭৭ সালে একদিন মাকে সঙ্গে নিয়ে নাখালপাড়া থেকে ফরিদপুরে যাচ্ছিলেন ফকির আলমগীর। পথে আরিচা ঘাটে দেখা পান এক অন্ধ বাউলের। তার মুখেই প্রথম শুনেন দেশ বিখ্যাত গান ‘মায়ের একধার দুধের দাম’। সেই বাউলের দোতারার সুরে গাওয়া গান রেকর্ডার দিয়ে ধারণ করে নেন তিনি। পরবর্তীতে বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে নিজের মতো তৈরি করে উপস্থাপন করেন মাকে নিয়ে এই বিখ্যাত গান।
মাকে নিয়ে এ পর্যন্ত যত গান হয়েছে তার মধ্যে অত্যধিক আলোচিত ফকির আলমগীরের এ গানটি।
‘মায়ের একধার দুধের দাম’ গানটি ১৯৭৭ সালে প্রথম প্রকাশিত বাংলা সঙ্গীত। মায়ের ভক্তিমূলক এই গানটি ১৯৭৭ আরও দু’বার ফকির আলমগীরের অ্যালবামে সংযুক্ত করা হয়। অ্যালবামের বাহিরে অবরোধ নামে একটি চলচ্চিত্র ও কাজী হায়াৎ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘বর্তমান’-এ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এর সুরে খালিদ হাসান মিলুর কন্ঠে ধারণ করে ব্যবহার করা হয়েছে।
গানটি নিয়ে গণমাধ্যমে এই দেশবরেণ্য জনপ্রিয় গণসংগীতশিল্পী জানান, গানটির কথায় এত দরদ যে, অনেক সময় আমি কেঁদে ফেলি। এমন অনেকবার হয়েছে, আমি যখন সরাসরি কোনো অনুষ্ঠানে গাইছি তখন আমার স্ত্রী টিভিতে গানটি শুনে কেঁদেছেন। আমার এক নাতি আছে। ওর মা নেই। ওর কষ্টটা আমরা সবাই অনুভব করি। এ জন্যই আমার স্ত্রী গানটি শুনলেই আপ্লুত হয়ে পড়েন। আমার কাছে এখন পর্যন্ত মাকে নিয়ে এই গানটিই সেরা মনে হয়।
গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। শুক্রবার দিবাগত রাতে দেশবরেণ্য জনপ্রিয় গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর করোনায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে দেশবাসী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হারিয়েছে বলে মন্ত:ব্য করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। ফকির আলমগীর এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। কিন্তু মাকে নিয়ে এ অনবদ্য গানের মাধ্যমে কোটি সন্তানের ভাবাবেগের সাথে জড়িয়ে থাকবেন তিনি।
সংগীত শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য এই বরেণ্য সংগীত শিল্পীকে একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, ভাসানী পদক, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার, তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক, জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদকসহ নানা পদকে ভূষিত করা হয়।
Leave a reply