ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
সরকার ঘোষিত টানা ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন এর প্রথম দিন ছিলো গত শুক্রবার। লকডাউন শিকেয় তুলে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আক্তার চলে যান নৌকা ভ্রমণে। যোগদানের প্রথম মাসেই বিতর্কে পড়লেন ইউএনও। সমালোচনা হচ্ছে পুরো উপজেলা জুড়ে। যেখানে তিনি কঠোর লকডাউন নিয়ন্ত্রণ করবেন, এখন নিজেই লকডাউন না মেনে নৌ ভ্রমণে গেলেন।
স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন নৌ ভ্রমণের উদ্যোক্তা। অবশ্য সড়ক বন্ধ করে ইউএনও’র গাড়ি রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিষয়টি সহজেই জানাজানি হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে আখাউড়ায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। যদিও এ বিষয় নিয়ে কেউ সরাসরি মুখ খুলতে চাইছেন না। ভ্রমণ সংশ্লিষ্টরাও এখন ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শুক্রবার দুপুরের পর ইউএনও’র সরকারি গাড়ি ও একটি প্রাইভেটকারে করে কয়েকজন আজমপুরের খেয়াঘাট এলাকায় যান। পরে ইউএনও রুমানা আক্তারসহ তার পরিবারের লোকজন ও উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া স্বপনের পরিবারের লোকজন একটি নৌকায় করে ভ্রমণে যান। নৌকার একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, শিশুসহ অন্তত ১৫ জন এর ছাউনিতে বসে আছেন। তারা একে অপরের সঙ্গে গল্পে মশগুল। একজন নৌকা থেকেই সবার বসে থাকার দৃশ্য ধারণ করেছেন। নৌকাটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্যও ধারণ করেন স্থানীয় লোকজন।
নৌকায় উঠার সময় ইউএনও’র সরকারি গাড়িসহ দু’টি গাড়ি সড়কে রাখা হয়। এতে করে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আজমপুরের কাজী শরীফ নামে এক যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে পারছিলেন না বলে গাড়ি সরাতে অনুরোধ করেন। একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ওই যুবক বলছেন যে তিনি সড়কের মাঝে রেখে দেয়া গাড়ি সরানোর কথা বললে উল্টো আরও হুমকি দেয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ইউএনও’র গাড়ি রাস্তায় থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত যেতে পারবেন না বলেও জানানো হয়।
উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কাজী ইউসুফ বলেন, আমি যেটুকু শুনেছি রাস্তার মধ্যে ইউএনও’র গাড়ি রাখা নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার ভাতিজাসহ এলাকার ছেলেদের তর্কাতর্কি হয়। গাড়ি রাস্তায় রাখার কারণে মোটরসাইকেল আনতে সমস্যা হচ্ছিলো বলে এটা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো প্রজেক্টের কাজে ইউএনও আসছিলেন কি-না সেটা আমার জানা নেই। তবে মনে হচ্ছে চেয়ারম্যান দাওয়াত দিয়ে ওনাকে এনেছেন। ইউএনও ও চেয়ারম্যানের পরিবারের লোকজন এ সময় উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান।
উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া স্বপন বলেন, আমাদের এলাকার খেয়া ঘাটে ইরিগেশন প্রকল্প দেখতে এসেছিলেন ইউএনও। পরে এখানে একটি বিনোদন স্পট করা যায় কি-না সেটি দেখানোর জন্য ইউএনওকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অনতিদূরেই থাকা বিজয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যানের একটি মাছের প্রজেক্ট দেখতে নৌকায় উঠা হয়। আমি বলেছিলাম যে ওই প্রজেক্ট দেখে এলে আমাদের এখানেও একটি প্রজেক্ট করা যাবে। পরিবারের লোকজন কেনো এতে ছিলো- এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে ফোনে কথা বুঝা যাচ্ছে না বলে সরাসরি কথা বলবেন বলে জানান।
এই ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আক্তারকে সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জাইকার একটি প্রজেক্ট দেখতে আমি সেখানে যাই। যেহেতু আমার পরিবারের লোকজন ঈদ উপলক্ষে আমার এখানে ছিলেন সেহেতু তাদেরকে নিয়ে গেছি।
আপনি তো মানুষকে ঘরে রাখার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছেন অথচ আপনি পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘুরতে গেলে মানুষ বিব্রত বা বিভ্রান্ত হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনি বিব্রত বা বিভ্রান্ত না হলেই হলো। আমার কি ব্যক্তিগত জীবন নাই। আমি আমার ছেলে মেয়েদেরকে সময় দিতে পারছিলাম না, তাই গেছি।
ইউএইচ/
Leave a reply