ফরিদপুর প্রতিনিধি:
একসময়ের সদা হাস্যোজ্জ্বল রবিউলের এখন জীবন কাটে মাটির গর্তে। জ্বর থেকে শরীরে নানা উপসর্গ, আর এখন সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্যহীন এই যুবকের জীবনের ১৫ বছর কেটে গেছে গর্তে শিকলবন্দি অবস্থায়।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের পশ্চিম চরবর্ণি গ্রামের বাসিন্দা এই তরুণের পুরো নাম মো. রবিউল মোল্লা (৩৫)। তিনি ওই গ্রামের ভ্যানচালক মো. নুরুল মোল্লার তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়।
ওই তরুণের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির পরিত্যক্ত চৌচালা একটি টিনের ঘরে মাজায় তালাসহ শেকল লাগানো অবস্থায় রবিউল রয়েছে প্রায় ছয় ফুট গভীর মাটির গর্তে। তার দিন-রাত কাটে ওই স্থানেই।
পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ বছরের শেকল বন্দি জীবনে ঘরটির মাটির মেঝে হাত দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে রবিউল নিজেই তৈরি করেছে ওই গর্ত। পুরো গর্তটি চারিদিকে প্রায় ১১ ফুট ব্যাসের ও ৬ ফুট গভীর।
রবিউলের মা আসমানী বেগম বলেন, রবিউলের সাত-আট বছর বয়সে জ্বর হয়েছিল। অসুস্থতার পর আস্তে আস্তে তাঁর হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে। পরিবারের সাধ্যমতো ডাক্তার- কবিরাজ সব দেখানো হলেও আর স্বাভাবিক হয়নি সে। একসময় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। ছাড়া থাকলে এদিক-সেদিক চলে যেত, তাই ওই সময় থেকেই তাকে বেঁধে রাখা হতো। প্রথমে দড়ি দিয়ে বাধা থাকতো কিন্তু সে সেটা খুলে চলে যেত, পরে শিকলের ব্যবস্থা করা হয়। এর পরে বাড়ির একটি টিনের ঘরে ওর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে কোমড়ে শিকল দিয়ে বেধে রাখা হত। এখন শীত-গরম কোন অনুভূতিই তাঁর শরীরে নেই। তাই শরীরে কখনোই কোনো কাপড় রাখে না রবিউল।
রবিউলদের প্রতিবেশীরা জানান, রবিউলের পরিবারের এই অসহায় অবস্থা দেখতে ভাল লাগে না। সমাজের বিত্তবান বা সরকার যদি এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিতো রবিউলের। তাদের দাবি উদ্যোগ নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়তো রবিউল সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারতো।
বোয়ালমারীর ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির মো. সেলিম এ বিষয়ে বলেন, ওর পরিবার অসহায়, ওকে ছেড়ে দিলে দূরে চলে যায়, যে কারণে ওর পরিবার বাধ্য হয়েই বেঁধে রেখেছে। তবে এই ভাবে বেধে রাখা সঠিক হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ জানান, সোশ্যাল মিডিয়াতে রবিউলের বিষয়টি আসার পরে আমাদের নজরে এসেছে, আমরা তার পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে (রবিউলকে) চিকিৎসার জন্য সহায়তা করবো।
Leave a reply