রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার রাষ্ট্রের বর্বরতা চালানোর সাথে সাথে চলছে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণাও। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে বেশ আগে থেকেই মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী ‘বাঙালি’ বলে অভিহিত করে থাকে। যদিও ইতিহাসবিদরা বলেন ভিন্ন কথা। আরাকনের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের ভাষার সাথে বাংলা ভাষার কিছুটা মিল থাকলেও তারা কোনোভাবেই জাতিগতভাবে বাঙালি নয়।
গত ২৫ আগস্ট ৩০টি পুলিশ চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে বর্বরতা শুরু হয়েছে। একই সাথে নতুন মাত্রা পেয়েছে বাংলাদেশবিরোধী নোংরা প্রচারণা। এবার মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদেরকে ‘বাঙালি’ বলার পরিবর্তে ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ বলা শুরু করে।
তবে সরকারিভাবে এই প্রচারণা শুরু পরপরই মিয়ানমারের ঢাকাস্থ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অং মিন্টকে ডেকে এ বিষয়ে হুশিয়ার করে দেয়ার পর ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ শব্দের ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা জারি করেছে সুচি সরকার।
কিন্তু আনুষ্ঠানিক সরকারি প্রচারণায় এ ধরনের শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও সরকার সমর্থক রাজনীতিক ও কর্মীরা অনলাইনে বাংলাদেশবিরোধী নানা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন ভুয়া ছবি ব্যবহার করে সেগুলোকে ‘বাঙালি সন্ত্রাসীদের কাণ্ড’ বলে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
এমনকি ৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ছবিকেও ‘মিয়ানমারে বাঙালি সন্ত্রাসীদের হামলা’ বলে প্রচার করছে দেশটির সরকারপন্থিরা। উপরে যে ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে বন্দুক হাতে মাটিতে ক্রলিং করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বেশ কিছু যুবক- সেটি ৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ছবি। এই ছবিটি বিখ্যাত ফটোগ্রাফি সংস্থা ‘গেটি ইমেজ’ এর আর্কাইভে গেলে পাওয়া যাবে।
ছবিটির সাথে ইচ্ছা মতো ক্যাপশন জুড়ে দিয়ে সেটিকে বর্তমানে ‘মিয়ানমারে সাধারণ নাগরিকদের ওপর বাঙালি সন্ত্রাসীদের হামলা’ ছবি বলে প্রচার চালানো হচ্ছে।
ভুয়া ছবি ব্যবহার করে এভাবেই চলছে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা
অবশ্য বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারের বয়ানের পক্ষে যেমন মিথ্যাচার চলছে তেমনি রোহিঙ্গাদের প্রতি সমবেদনা দেখাতে গিয়ে অনেকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ভুল ছবির আশ্রয় নিচ্ছেন। হত্যা ও নির্যাতনের ভয়াবহ অনেক ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে ‘রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন’ এর বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে দেখা গেছে সেগুলো ভিন্ন ঘটনার ছবি বা ফুটেজ। বিবিসি এরকম বেশ কয়েকটি ছবি যাচাই করে সেগুলোকে ভুয়া বলে চিহ্নিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুইপক্ষে মিথ্যা ও ভুল ছবি-ভিডিওয়ের এত ছড়াছড়ি যে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজেদের সূত্রের তোলা ছবি বা ভিডিও ছাড়া কোনো কিছুকেই তারা প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করছে না।
অবশ্য নিজেদের তোলা ছবি ও ফুটেজসহ বিভিন্ন প্রমাণের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মনে করছে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বর্বরতা ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে’র শামিল।
/কিউএস
Leave a reply