স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:
বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে না দেয়ায় নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় ইতি আক্তার (১৯) নামের ৬ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে স্বামী মনির হোসেন (২৭), শ্বশুর নজরুল ইসলাম (৫২), শাশুড়ি স্বপ্না আক্তার (৪৫) ও দেবর শুভ মিয়াকে (২৫) আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করেন।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুরে নেত্রকোণার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী কেন্দুয়া থানায় মামলার বাদী ও সাক্ষিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
মামলার এজাহারসূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২২ মার্চ রেজিস্ট্রি কাবিল মূলে কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের সিংহেরগাঁও গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মনির হোসেনের সাথে পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উত্তরবনগাঁও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে ইতি আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক বাবদ ছেলে পক্ষকে পৌনে দুই লাখ টাকা মূল্যের মোটরসাইকেলসহ আরও এক লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র প্রদান করে মেয়েপক্ষ। কিন্তু যৌতুকলোভী স্বামী ও পরিবারের লোকজন বিয়ের পর বাবার বাড়ি থেকে আরও তিন লাখ টাকা এনে দিতে ইতি আক্তারকে চাপ দিতে থাকে। এতে কাজ না হলে একপর্যায়ে স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুরি ও দেবর মিলে পালাক্রমে ইতি আক্তারের ওপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। এরই জের ধরে গত ২৪ জুলাই দুপুরে স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন মিলে ৬ মাসের অন্তঃস্বত্তা ইতি আক্তারকে মারপিট করে আহত করে।
পরে সংবাদ পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুটে গিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে অজ্ঞান অবস্থায় ইতি আক্তারকে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
ইতি আক্তার জানান, অভিযুক্তরা প্রায় সময়ই যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতো তাকে। ঘটনার সময় তারা পেটসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করে। মারপিটে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান বলেও জানান ইতি। তারপর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। এছাড়া মারপিটের পর থেকে তার গর্ভের সন্তানের নড়াচড়া বন্ধ রয়েছে, সন্তানের ক্ষতি হয়েছে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) কেন্দুয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আউয়াল সরদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মামলার তদন্তকাজ চলছে এবং পলাতক থাকায় আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না, তবে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সন্ধ্যায় কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহ নেওয়াজ জানান, তিনি মামলা রুজু এবং পুলিশ সুপার কর্তৃক মামলার বাদী ও সাক্ষিদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওসি আরও জানান, গত ২৯ জুলাই গৃহবধূ ইতি আক্তার বাদী হয়ে তার স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুরি ও দেবরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি দায়ের করেন। বর্তমানে মামলার তদন্ত চলছে। উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আউয়াল সরদার মামলাটি তদন্ত করছেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে পলাতক থাকায় বার বার চেষ্টা করেও বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্তদের কারো সাথেই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিবেশি সিদ্দিক মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, মামলার হওয়ার পরপরই তারা সবাই পালিয়েছে, বাড়িতে কেউই নেই।
Leave a reply