দীর্ঘ ২০ বছর পর ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতার দখল নিলো তালেবান। বিশ্বব্যাপী আলোচনায় তালেবানের শীর্ষ নেতা মোল্লা আব্দুল ঘনি বারাদার। তিনিই দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন বলে জোর গুঞ্জন। তালেবান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার সখ্যের বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
ফ্রান্স টুয়েন্টিফোরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনীকে হটানোর সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে ছিলেন বারাদার। এরপর অবশ্য তালেবানের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পড়েন বারাদার। পথ পরিক্রমায়, শীর্ষ তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের ডান হাত হয়ে উঠেন। মোল্লা ওমরের বোনকে বিয়ে করে গড়েন আত্মীয়তার সম্পর্ক। ২০১০ সালে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র যৌথ অভিযানে পাকিস্তানের করাচি শহরে ধরা পড়েন বারাদার। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই নাকি তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। মূলত, আফগানিস্তান ছাড়ার নীতি নেয়ায় সমঝোতার অংশ হিসেবে বারাদারকে মুক্তি দেয় তারা। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর বারাদারের ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল তালেবান।
জীবনের দীর্ঘ সময়ে সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন বারাদার। শুধুমাত্র তালেবান শাসনামলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কিছুটা স্থিতি পেয়েছিলেন তিনি। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি হেরাত আর নিমরোজের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন বলে জানা গেছে। সে সময় পাকিস্তান, সৌদি আরব আর সংযুক্ত আরব আমিরাতই কেবল তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেন বারাদার। তখন থেকেই তার কূটনৈতিক দক্ষতা আলোচিত হতে থাকে।
ফ্রান্স টুয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সাথে বৈঠক করেন বারাদার। জুলাই মাসে যান চীন সফরে। সেখানে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সাথেও ফলপ্রসূ আলোচনা হয় তার।
তালেবানের এই নেতা রোববার সকালে পলাতক আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এবং আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে সমঝোতা করতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হাজির হন এমন কথাও উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। দোহায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় তালেবানের যে দলটি রয়েছে তাদের অন্যতম সদস্য সংগঠনটির রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বারাদার।
আফগানিস্তানের ওরুজগান প্রদেশের দেহ রাহওয়াদ জেলার উইটমাক গ্রামে ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করা ৫৩ বছর বয়সী এই নেতাকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার সম্পর্ক আগামীদিনে কেমন থাকে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
Leave a reply