কেমন গেল পিএসজিতে মেসির প্রথম সপ্তাহ

|

ছবি: সংগৃহীত

৪৯ হাজার সমর্থকের উপস্থিতিতে রাজার মতো তার আগমনের দৃশ্যে ছিল বেশ নাটকীয়তা। আতশবাজি আর বাদ্যযন্ত্রের শব্দে মায়াবী এক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল পিএসজির মাঠ পার্ক দে প্রিন্সেসে। রঙিন আলোর রোশনায় আগমন ঘটেছিল মেসি নামের মহাতারকার। সমর্থকদের লিও লিও চিৎকারে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মাঠ। হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।

ক্লাবে যোগ দেয়ার পর পার হয়ে গেছে এক সপ্তাহ। কিন্তু মেসির জন্য কেমন ছিল আলোচিত এই সময়? ইএসইপিএন খুঁজে বের করেছে এক সপ্তাহে মেসির দিনলিপি। যমুনার পাঠকদের জন্য সেটাই তুলে ধরা হলো।

গত মঙ্গলবার সকালে তারা জিতেছে ফাইনাল ট্রেনিং ম্যাচ। পিএসজির পুরো স্কোয়াড দুই ভাগে ভাগ হয়ে খেলেছে সেখানে। লিওনেল মেসি ছিলেন জয়ী দলে। তার দলে ছিলেন নেইমার, কেইলর নাভাস, ডি মারিয়া, ড্রাক্সলার এবং কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাদের প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন ইকার্দি, মার্কুইনোস, ভেরাত্তি ও আশরাফ হাকিমি। তারা কিছুই করতে পারেনি সেই ম্যাচে। মেসির দল হারার ধারেকাছেও ছিল না এবং এরই মধ্যেই প্যারিসের ক্লাবটির ট্রেনিং গ্রাউন্ড ক্যাম্প দে লেগোসের রাজা বনে গেছেন এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মেসিকে আবারও একজন ফুটবলারের মতোই মনে হচ্ছে।

আগস্টের ৫ তারিখ ফুটবল বিশ্ব ও ইন্টারনেট দুনিয়ায় তোলপাড় তোলা মেসির বার্সা উপাখ্যানের সমাপ্তির পর মেসির জীবন আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। প্যারিসে তার আগমন, লা বুর্হে বিমানবন্দরে অগণিত সমর্থকদের শুভেচ্ছার দৃশ্য, পার্ক দে প্রিন্সেস এমনকি তার বিলাসবহুল হোটেলের সামনে অপেক্ষমাণ ফ্যানদের জটলা দেখে মুগ্ধ মেসি।

প্যারিস, ফ্রান্স ও বিশ্বজুড়ে মেসিম্যানিয়া এখন তুঙ্গে। নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে মেসিকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় উৎসাহে ফেটে পড়েছিল পার্ক দে প্রিন্সেস। তারপরই স্ট্রাসবুর্গকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে পিএসজি। এসবই উপভোগ করছেন মেসি।

প্যারিসকে বেশ পছন্দও করে ফেলেছেন মেসি পরিবার। মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা বেশ কয়েকবারই শপিংয়ে গেছেন, আগের মতো দেখতে গেছেন ফ্যাশন উইক। থিয়াগো, মাতেও এবং সিরোকে নিয়ে মেসি দম্পতি প্যারিসের ডিজনিল্যান্ডেও ঘুরতে গেছেন কয়েকবার। গত এক সপ্তাহে প্যারিসকে ফুটবল নগরী হিসেবে আবিষ্কার করেছেন ছয় বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী লিওনেল মেসি। তাকে ঘিরে পুরো শহরবাসীর উচ্ছ্বাস যেমন মন কেড়েছে তেমনি, নিজের মতো শান্ত নীরব সময় কাটাতে পারাও ভালো লেগেছে এই ফুটবল গ্রেটের।

ছবি: সংগৃহীত

লা রয়াল মনচো হোটেলের অভিজাত স্যুটে থাকছেন মেসি। প্রতি রাতের জন্য ২০ হাজার ইউরো খরচ করে বেশ শান্তিতেই আছেন তিনি। সোমবার সন্ধ্যায় আন্তোনেল্লার সাথে ডিনারে যান মেসি, কেবল দুজনই। শহরের অন্যতম সেরা ইতালিয়ান রেস্টুরেন্ট সিজারে গিয়েছিলেন তারা। পিএসজি খেলোয়াড় এবং শহরের সেলিব্রিটিরাই সচরাচর যান সেখানে। আভেন্যু ওচ থেকে আর্ক দো ত্রায়োম্পের অন্য পাশে আভেন্যু দা ওয়াগ্রায় গেছেন ঘুরতে। তরুণ দুই ভক্ত ছাড়া তাদের সামনে ভিড় করেননি কেউ। দুই ভক্তকে তাদের অটোগ্রাফও দিয়েছেন মেসি।

শহরজুড়ে ঘুরে বেড়ানোর সাথে মাঠে নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন লিও।

রোববার মেসি অনুশীলনে রন্ডোতে অংশ নেন মেসি, যেখানে ফুটবল এবং টেবিল টেনিস অনেকটা মিশিয়ে খেলা হয়। এরপর টেকবলে মিডফিল্ডার ইদ্রিসা গেয়েকে হারিয়েছেন তিনি। সোমবার নতুন সতীর্থদের সাথে মেসির অংশ নিয়েছেন প্রথম দলগত অনুশীলনে। মেসির প্রতিভার ধারও উপস্থিত সবাই টের পেয়েছেন আবার।

পিএসজির ট্রেনিং গ্রাউন্ডে নতুন সতীর্থদের সাথে মেসি।
ছবি: সংগৃহীত

আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা জয়ের পর প্রায় এক মাসের বেশি সময় ফুটবলে লাথিও মারেননি তিনি। ফিটনেসেও ছিল ঘাটতি। কিন্তু মেসি ছিলেন অবিশ্বাস্য, মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখেছেন বাকিরা। অনুশীলনে মূল ড্রিলে স্বাধীন খেলোয়াড় হিসেবে খেলছেন লিও। ছোট দুটি দলে ভাগ হয়ে খেলার সময় দুই দলেই ছিলেন তিনি। বল পায়ে সব কাজ সহজ করে ফেলছিলেন লিও, ছিলেন মুগ্ধতা জাগানিয়া।

মঙ্গলবার, কোচ মরিসিও পচেত্তিনো দুই বনাম দুইয়ের অনুশীলনে মেসির জুটিতে রেখেছিলেন এমবাপ্পেকে। স্বাভাবিকভাবেই, বেশ জমেছে তাদের জুটি, অনেক গোলও পেয়েছেন তারা। এরপর ছয়জন বনাম ছয়জনের ড্রিলেও এই দু’জন ছিলেন একই দলে। সেখানেই প্রথমবারের মতো একসাথে খেললেন মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে।

ছবি: সংগৃহীত

অনেক হাসাহাসি হয়েছে মাঠে ও ড্রেসিংরুমে, মেসি খুব সহজেই মানিয়ে নিচ্ছেন নতুন পরিবেশের সাথে। রোববার অ্যান্ডার হেরেরার ৩২তম জন্মদিনের পার্টিতে স্বাভাবিকভাবেই নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন মেসি। হেরেরার ঘরে গিয়েছিলেন নেইমার, ডি মারিয়া, পারেদেস, নাভাস, মার্কিনিয়োস, ইকার্দিসহ আরও অনেকের সাথে। বারবিকিউয়ের আর্জেন্টাইন ধরন আসাদো তৈরি করা হয়েছিল রোববার অনুশীলন শেষে। অনুশীলন মাঠেই এই আয়োজনটাও মনে ধরেছে মেসির।

এখনই বলতে গেলে হয়তো বেশি তাড়াহুড়া হয়ে যায়। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে যে, মেসির আগমনে ট্রেনিংয়ে বাকি খেলোয়াড়দের প্রচেষ্টা উঠে গেছে আরও উপরে।

সবাই যেন মেসিকে দেখাতে চায় তারা নিজেরা কত ভালো খেলোয়াড়। এমনকি রন্ডো খেলার সময়েও সবার মধ্যে একাগ্রতা ও তীব্রতার পার্থক্যটা ছিল চোখে পড়ার মতো। মেসি আসায় ক্লাবেরই মান বেড়ে গেছে। এই মুহূর্তে ক্লাবের আবহটাও অবিশ্বাস্য। নাম না প্রকাশ করার শর্তে ইএসপিএনকে জানিয়েছেন পিএসজির এক সূত্র।

অনুশীলনে বেশ খুশি মেসি। অপেক্ষায় আছেন পিএসজির জার্সিতে অভিষেকের। খুব সম্ভবত ২৯ আগস্টেই রেঁসের বিপক্ষে ম্যাচেই এটি ঘটতে যাচ্ছে। এছাড়া এসবের জীবনের অন্যান্য প্রায়োগিক দিক নিয়েও ভাবতে হচ্ছে তাকে। তালিকার প্রথমেই আছে পরিবারের জন্য বাসা এবং বাচ্চাদের জন্য স্কুল খুঁজে বের করা।

থিয়াগো, মাতেও ও সিরো হয়তো হোটেল থেকে কাছেই ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার স্প্যানিশ স্কুলটায় ভর্তি হতে যাচ্ছে। আর বার্সেলোনার কাস্তেদেফেলের মতো সুইমিংপুল, বাগানসহ বড় একটা বাড়ি খুঁজছেন লিও। তেমন বাড়ি খুঁজে পেতে প্যারিস থেকে একটু দূরে নুয়ি বা বুজিভালের মতো উপশহরের দিকে যেতে হতে পারে তাকে। নেইমারও সেখানেই থাকেন। তবে শহরের মধ্যে থাকার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন মেসি।

বার্সেলোনাতে এত বছর তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন পেপে কস্তা। প্রত্যাশামাফিক প্যারিসেও মেসির সাথেই আছেন তিনি। ভাগ্যই বলতে হবে, প্যারিসে সহজেই জীবনযাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেতে ঝামেলায় পড়তে হবে না পেপেকে। তার নিজের ছেলে আলভারো আছেন এখানে। আর আলভারো নেইমারের ব্যক্তিগত সহকারী।

এই মুহূর্তে ফিটনেস ফিরে পাবার চেষ্টায় আছেন মেসি। তবে এর মধ্যে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেছে, প্যারিসে বেশ কয়েকজন ভালো সঙ্গী পেয়েছেন তিনি।

 

/এমই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply