জালিয়াতি করে নেয়া কনস্টেবলদের চাকরি গেলেও, চাকরি দাতাদের হয়নি কিছুই

|

জালিয়াতি আর মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে পুলিশে চাকরি নেয়া একটি চক্রকে শনাক্ত করেছে পুলিশ সদর দফতর। জালিয়াতির প্রমাণে ১৮ কনস্টেবলের চাকরি গেলেও চক্রের কর্মকর্তারা এখনও বহাল তবিয়তেই আছেন। কারও আবার পছন্দের জায়গায় বদলিও হয়েছে।

অভিযোগ আছে, ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি হয় এসব তরুণের। এখন তাদের চাকরি চলে গেলেও রহস্যজনক কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে চাকরি পাইয়ে দেয়া পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাগলা গ্রামে স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়ে পুলিশের কনস্টেবল পোস্টে চাকরি দেয়া হয় ওই ১৮ জনকে। প্রকৃতপক্ষে তারা কেউই এই গ্রামের বাসিন্দা না। জেলা কোটায় কনস্টেবল পদে চাকরির জন্যই এই জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়। তদন্তে দেখা যায় ২৪ মে ২০১৯ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই তাদের নামে জমি কেনা দেখানো হয়।

ভোলাবো দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাস্টার জানান, এক পর্যায়ে পুলিশ তার কাছে ভেরিফিকেশনের জন্য গেলে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন তারা কেউই ওই গ্রামের স্থানীয় না।

রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় প্রশিক্ষণ শেষে ১৮ তরুণের কনস্টেবল হিসাবে প্রথম পোস্টিং হয় ১৮ জেলায়। কিন্তু নতুন চাকরি পাওয়াদের বিষয়ে পুলিশের এক তদন্তে বেরিয়ে আসে ঠিকানা জালিয়াতির তথ্য। নানা পদক্ষের পর শেষপর্যন্ত চাকরি হারায় তারা। চাকরি যাওয়া কনস্টেবলের একজন হুমায়ন কবির। কর্মস্থল ছিলো সিরাজগঞ্জ। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হলেও নারায়ণগঞ্জের ভুয়া ঠিকানা দিয়ে সে স্থানীয় কোটায় চাকরি নিয়েছিল বলে জানান সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম। পরে তাকে বরখাস্ত করা হয় বলেও জানান তিনি।

রূপগঞ্জের পরিচয়ে চাকরি পাওয়া আরেকজন মো. রাসেল। তার স্থায়ী ঠিকানা সিরাজগঞ্জ। তিনি যোগ দিয়েছিলেন নড়াইলে। নড়াইলের তৎকালীন পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন ভুয়া পরিচয়ে চাকরি হারানো কনস্টেবলদের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে এসব জালিয়াতি থেকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন।

সে সময় ১৮ পুলিশ সদস্যের ঠিকানা যাচাই করতে বলা হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশকে। সেখান থেকে দায়িত্ব দেয়া হয় স্থানীয় থানাকে। কিন্তু প্রথম দফা ঠিকানা যাচাইয়ে ৬ উপ-পরিদর্শক এবং রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও গাফেলতির প্রমাণ পাওয়া যায়। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশও করা হয় তাদের বিরুদ্ধে।

দ্বিতীয় দফা তদন্তে রূপগঞ্জের তখনকার ওসি ইনস্পেক্টর মাহমুদুল হাসান প্রত্যেকের ঠিকানা সঠিক বলে রিপোর্ট দেন। শুধু তাই নয়, মানবিক কারণে চাকরির সুপারিশও করেন; যা নিয়মবহির্ভুত। তিনি এখন বদলি হয়ে ডিএমপিতে কর্মরত।

জালিয়াতির সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা এখনও তদন্তাধীন। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে একাধিকবার পুলিশ সদরে যোগাযোগ করা হয়। সেখানকার গণমাধ্যম শাখার এআইজি সোহেল মাহমুদ পরামর্শ দিয়েছেন এ ব্যাপারে জানতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলতে। আর নারায়ণগঞ্জ থেকে বলা হয় পুলিশ সদরে যোগাযোগ করতে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply