না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন খাবার স্যালাইনের আবিষ্কারক ড. রফিকুল ইসলাম। গতকাল ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ড. রফিকুল দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
অনেকদিন ধরেই হৃদরোগ এবং বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
প্রচারবিমুখ এই মানুষটির আবিষ্কারে বেঁচেছে লক্ষ মানুষের প্রাণ। যদিও বর্তমানে ওষুধের দোকানে স্বল্প মূল্যেই খাবার স্যালাইন পাওয়া যায়। তবে এখন সবাই জানে এক মুঠো চিনি বা গুড় আর তিন আঙ্গুলের এক চিমটি লবণ আধা লিটার বিশুদ্ধ পানিতে মিশিয়ে ডায়রিয়ার প্রাণরক্ষাকারী দ্রবণটি তৈরি করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী শিবিরগুলোতে কলেরা ছড়িয়ে পড়লে এই খাবার স্যালাইন দিয়ে অনেকের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। সহজ এই পদ্ধতিতে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশেও ডায়রিয়ার প্রকোপ ঠেকানো সম্ভব হয়েছিল। স্যালাইন তৈরীর এই পদ্ধতি সেই সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচার চালিয়ে মানুষকে জানানো হয়েছিল। তখনকার দিনের বাস্তবতায় এর ফলেই লাখো মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। ড. রফিকুল ইসলামের কল্যাণেই সহজ এবং কার্যকরী এই আবিষ্কারটি সম্ভব হয়েছিল।
এর পরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার আবিষ্কৃত খাবার স্যালাইনকে স্বীকৃতি দেয়। জনস্বাস্থ্যে খাবার স্যালাইনের গুরুত্ব বিবেচনায় ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যান্সেট একে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আখ্যা দিয়েছিল।
১৯৩৬ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে রফিকুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে যোগ দেন আইসিডিডিআরবিতে। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন। তারপর ব্রিটেনে ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও হাইজিন বিষয়ে তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। ওষুধ নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালালেও তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ‘ওআরএস’ বা খাবার স্যালাইন।
Leave a reply