‘বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে’

|

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক সম্প্রতি এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে কোভিড ১৯ পরিস্থিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেবার কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করে। আলোচনায় তারা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেবার ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম। এছাড়াও আলোচনা করেন, আনু মুহাম্মদ (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), কামরুল হাসান মামুন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়), আরাফাত রহমান (বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ), কাজী মারুফুল ইসলাম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), নাসির উদ্দিন (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)।

আলোচকবৃন্দ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মানস চৌধুরী, রবিউল আলম, ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা, তপন মাহমুদ লিমন, বখতিয়ার আহমেদ, মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সামিনা লুৎফা, রুশাদ ফরিদী, সৌভিক রেজা।

বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে তাদের প্রস্তাবগুলো নিম্নরূপ:

১। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেটি না করলে প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতীকী ক্লাস নেয়া শুরু করবেন।

২। অবিলম্বে (১ সেপ্টেম্বর থেকে) বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে ফেরার সুযোগ করে দিতে হবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথম থেকেই পূর্ণ কার্যক্রম শুরু করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাই আবাসিক হলে প্রথমে শুধু অনার্স এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা, যারা তাদের শিক্ষাজীবনের শেষের দিকে রয়েছে তাদের ওঠার অনুমতি থাকবে। আবাসিক হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না করে কোনভাবে এইসব পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার নেয়ার কোন ধরনের কার্যক্রম শুরু করা যাবে না। এইসব ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে, পরবর্তী ব্যাচগুলোর ধাপে ধাপে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। প্রাথমিক ধাপে যে শিক্ষার্থীরা হলে থাকবে আর যারা বাসা থেকে আসবে তাদের পরীক্ষা আলাদা রুমে নেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৩। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ না করলেই নয় যে, আমাদের ছাত্রাবাসগুলোর আবাসিক ব্যবস্থা খুবই খারাপ। হলগুলোতে গণরুম থাকে, পরিবেশের অবস্থাও খুব একটা ভালো না। এগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন কোনো আবাসিক হলে গণরুম নামক কোনো ব্যবস্থা থাকতে না পারে তার সমাধানে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ছাত্রাবাসগুলোতে যাতে শুধু শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে অবস্থান করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া হলগুলোতেও প্রাথমিক চিকিৎসা এবং শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে কাজ করে পুরোদমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আবাসিক হলের অবস্থা আর আগের মতো থাকতে পারে না। করোনার এই দুর্যোগ পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি সুযোগ এনে দিয়েছে আবাসিক হলগুলোকে ঢেলে সাজানোর। তাই আবাসিক ব্যবস্থাকে উন্নত করার পরিকল্পনা প্রশাসন এবং সরকারকে এখনই ভাবতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আবাসিক হল ব্যবস্থাপনা পরিপূর্ণভাবে শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে নয়।

৪। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেস্ট এবং টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে হলে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীরা কোভিড টেস্ট এবং টিকাগ্রহণে অগ্রাধিকার পায়। ক্যাম্পাসে ব্যবস্থা করা গেলে সবচাইতে ভাল হয়, তাতে শিক্ষার্থীরা ভিড় এড়িয়ে টিকা নিতে পারবে।

৫। ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থিত মেডিকেল সেন্টারগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইসোলেশনের ব্যবস্থা, অসুস্থ হলে শিক্ষার্থীদের দেখা-শুনার ব্যবস্থা উন্নত করার কোনো বিকল্প নাই। এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে জেলা বা বিভাগীয় সদর হাসপাতালের আইসিইউ শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের প্রয়োজনে বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৬। পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত পাঠদানের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তবে এখানেও করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ৫০% অনলাইন এবং ৫০% অফলাইন ক্লাস চালু করা যেতে পারে। ৫০% অফ লাইন ক্লাসের মধ্যে ব্যবহারিক ক্লাস এবং অন্যান্য কার্যক্রম যেগুলো অনলাইনে করা কঠিন সেসব থাকতে পারে।

৭। এছাড়া অনলাইন ক্লাসেও হাইব্রিড পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে । যে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে পারবে, তারা সশরীর অনসাইট ক্লাস করবে। যারা পারবে না তারা অনলাইন ক্লাসে অংশ নেবে। যে ক্লাসে এসেছিলো সে অসুস্থ হলে সে অনলাইন চলে যাবে। কিন্তু যারা ক্লাসে এসেছে তাদের এবং শিক্ষকের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করার ভালো ব্যবস্থা তৈরী রাখতে হবে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে, আবার পুরো অনলাইনে যাওয়া যেতে পারে, তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার যেন হাইব্রীড পদ্ধতিতে ফিরে আসা যায় তার প্রস্তুতি রাখতে হবে।

৮। শিক্ষকদের অনলাইন টিচিং লার্নিং ম্যানেজমেন্টের সিস্টেম তৈরি করার জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা কমিটি গঠন করে এর কাজ শুরু করতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯। এখন প্রচুর মানুষই (শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়) আছেন, যারা আগে কখনো মানসিক সমস্যায় ভোগেননি। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে উপর্যুপরি লকডাউনের চাপে সামাজিক সম্পর্কের শিথিলতা, সামাজিক মেলামেশা বন্ধ থাকা, পরিবারের সদস্যের মৃত্যু বা অসুস্থতা, নিজের অসুস্থতা বা ভয় ইত্যাদি নিয়ে বেশির ভাগ মানুষই দারুণ মানসিক চাপে আছেন। অনেকেই অ্যাংজাইটি বা ডিপ্রেশন ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুতর মানসিক ব্যধিতে ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

১০। অনলাইনে সুষ্ঠভাবে পড়াশোনা চালিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সার্ভিসের বিশেষ প্যাকেজ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

১১। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার সেফটি নেটের ব্যবস্থা করতে হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply